খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

সংবিধান সংস্কারে একগুচ্ছ প্রস্তাব জাতীয় পার্টির

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৪০ পি.এম | ২৮ নভেম্বর ২০২৪


অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জাতীয় পার্টিও সাংবিধানিক কাঠামোতে সংস্কারের লক্ষ্যে সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রথম সুপারিশে সরকারি দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি না হওয়ার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এই সুপারিশের কথা তুলে ধরেন। জাপার পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত আনাসহ সংবিধানে ১৯টি পয়েন্টে সংযোজন, বিয়োজন নিয়ে প্রস্তাব, সুপারিশ করা হয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা হলো ওয়েস্টমিনিস্টার ধরনের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনায় সংসদ প্রধান ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রের সমস্ত সিদ্ধান্ত জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনার পর সংসদের মাধ্যমে নেওয়া হয়। সরকারের যেকোনো কার্যক্রমের জন্য সংসদের কাছে জবাবদিহিতা করার ব্যবস্থা থাকে।

জিএম কাদের বলেন, বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালুর প্রথম থেকেই সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধির খসড়া সেভাবেই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী  বা সরকারের প্রধান নির্বাহীকে সংসদের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এটি করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ-৭০)। এই বিধানটি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দলীয় সংসদ সদস্যদের (যারা সংসদ সদস্য বা এমপি নামে পরিচিত), সংসদে ভোটদানের সময় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বা যাকে সংসদের ভাষায় দলীয়  হুইপিং বলা হয় তার বাইরে ভোট দানের অধিকার দেয় না। এটি প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় দলের সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিশ্চিত করে। সংসদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরকার গঠিত হয়।

এছাড়া সংসদের সকল সিদ্ধান্ত সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। শুধুমাত্র সংবিধানের সংশোধনী যার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীকে একতরফাভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং সংসদে তা পাস করানোর ক্ষমতা দেয়। সরকারি দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী যদি দুজন ভিন্ন ব্যক্তি হতেন তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংসদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও ভারসাম্য থাকতে পারত। ঐতিহ্যগতভাবে এটি কখনও ঘটেনি। এখন পর্যন্ত যখনই সুযোগ আসে, দলীয় প্রধানই প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রস্তাব করতে চাই যে সংসদ সদস্যদের সংসদের নিজ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোটদানের সুযোগ থাকবে। তবে তারা সেটা করতে পারবে যখন দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে একটা সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যাবে এবং কমপক্ষে দলীয় সংসদ সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে সেভাবে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে দরকষাকষি কিছুটা কঠিন হয়ে পড়বে এবং সংসদ অধিকতর কার্যকর ও সররকারের স্থায়িত্ব কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে।

জিএম কাদের বলেন, ইতিহাসের অভিজ্ঞতা দেখায়, যদি একজন ব্যক্তি যথেষ্ট দীর্ঘ সময়ের জন্য সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন তবে সেই ব্যক্তি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা দেখান এবং স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এইভাবে বিশ্বের অনেক দেশের সংবিধানে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা যেকোনো ব্যক্তির দ্বারা সর্বোচ্চ দুই বার  শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের জন্যও একই পরামর্শ দিতে চাই ‘অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ দুই বারের বেশি সে পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না’। এই বিধানটি আমাদের সংশোধিত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন,  আরও সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে যাওয়ার আগে আমরা পরামর্শ দিতে চাই যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা উচিত। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার  গঠনের বিধানগুলো পুনরায় চালু করা হবে। এই সংশোধনীতে কিছু বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল যা উপযুক্ত বলে মনে হয়নি, যেমন চলমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। তাছাড়া এ সংশোধনী  জনবিরোধী শর্ত আরোপ করে জনগণের মৌলিক অধিকারকে সীমাবদ্ধ করেছে এবং অধিকারসমূহের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের প্রায় এক তৃতীয়াংশকে অপরিবর্তনীয় করে তুলেছে যা অযৌক্তিক।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বিচার বিভাগ থেকে না হওয়াই ভালো। কারণ এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাছাড়া এর মাধ্যমে রাজনীতি ও নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের একটি মিশ্রণের অনাকাঙিক্ষত উদাহরণ সৃষ্টি হতে পারে।

্রিন্ট

আরও সংবদ