খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:৩০ পি.এম | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪


আজ ৭ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিন শত্র“মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। গৌরবগাঁথা এই দিনটির কথা মুক্তিকামী সাতক্ষীরাবাসীর স্মৃতিতে আজও অম্লান। দিনটি ঘিরে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে শহিদ আব্দুর রাজ্জাকের কবর জিয়ারত ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ জানান, দীর্ঘ ৯ মাস পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতেই পালাতে শুরু করে পাকবাহিনী। পরদিন প্রত্যুষে রাজাকার আলবদর বাহিনী তাদের অস্ত্র ও মালামাল ফেলে প্রাণ বাঁচাতে স্ব স্ব ক্যাম্প থেকে পালাতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর ভোর হতেই মুক্ত হওয়ার সুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এর আগে ১৯ ও ২০ নভেম্বর মুক্ত হয় শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ। ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় কলারোয়া ও দেবহাটা। সেখান থেকে পিছু হটে পাকবাহিনী পারুলিয়া ব্রিজের কাছে প্রতিরোধ করেও ব্যর্থ হয়ে পিছু হটে।
তিনি বলেন, ১৬টি মুখোমুখি ও খন্ড যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। লেঃ বেগ, ক্যাপ্টেন হুদা, লেঃ আরেফিন, মেজর জলিলের বাহিনী সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর ভোর বেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদ বাহক সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের ছাকুর কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৭ জনের গ্র“প পুরাতন সাতক্ষীরা হয়ে সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরে পৌঁছায়। এ গ্র“পের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল মহিত খান চৌধুরী দুলু। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আবু নাছিম ময়না। এ গ্র“পে ছিলেন বদরুল, জাহিদ, সাদেক, আবু নাছিম ময়না, আব্দুর রশিদ, আজি, মাহবুব, গফুরসহ অনেকে। মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের মোস্তাফিজ, জজ, মঈদ খানসহ মুজিব বাহিনীর এ দলটি পরে চলে যান খুলনার কপিলমুনি যুদ্ধে। শহরের পশ্চিম দিক থেকে ৮নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন শফিউল­াহ ও ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে সোনা, আব্দুল­াহ, রফিক, মান্নান শহরে প্রবেশ করে যশোরের মণিরামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। 
তিনি আরও জানান, প্লাটুন কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে আখড়াখোলার রায়পুর থেকে মিজান, রশিদ, কাদের, দিলীপ, হাসান, মোর্জতা, আব্দার, নজরুলের গ্র“পটি সকাল ১০টায় সাতক্ষীরায় পৌঁছায়। মুজিব বাহিনীর উপ-অঞ্চল প্রধান কাজী রিয়াজের নেতৃত্বে আনোয়ার, লিয়াকত, শাহাবুদ্দিন, সরোয়ার, আব্দুর রশিদের দল সরাসরি বিনেরপোতায় যায়। এদিকে এফএফ বাহিনীর প্রধান স ম আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার দল কপিলমুনি যুদ্ধে যোগ দেন। গেরিলা কমান্ডের পদ্মা গ্র“পের প্রধান সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে অতুল, সুশীল, বক্কার, কার্তিক, রমেশের দলটি মাগুরা যুদ্ধ শেষ করে কপিলমুনি পৌঁছায়। লেঃ (অবঃ) রহমতুল­া দাদু বীর প্রতীকের নেতৃত্বে পাইকগাছা হাতিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে যুদ্ধ করেন কোকিল, আলফাজ, শফি, বজলু, মুজিবর ও গফ্ফার। দীর্ঘ নয় মাসে পাক সেনাদের সাথে সাতক্ষীরা অঞ্চলে যে সকল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, ভোমরা যুদ্ধ, কাকডাঙ্গা যুদ্ধ, বসন্তপুর যুদ্ধ ও বেলেডাঙ্গা যুদ্ধ উলে­খযোগ্য।
তিনি জানান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সাতক্ষীরার যে সমস্ত তরুণ তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে শামছুজ্জোহা খান কাজল, নাজমুল আরেফিন খোকন, কমান্ডো সিরাজুল ইসলাম, নারায়ন চন্দ্র ধর, আবুল কালাম আজাদ, জোলযার, হারুনার রশিদ, আনছার আলী, মোজাম্মেল হক, আমিন উদ্দিন গাজী, রফিকুল ইসলাম, আজিজার রহমান, আবু বক্কর গাজী, হাফিজ উদ্দিন, এনামুল হক, আবুল কাশেম, সলিল কুমার, আব্দুল আজিজ, কমান্ডো আব্দুল কাদের, নায়েক সফি চৌধুরী অন্যতম।
এদিকে দিনটি স্মরণে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শহিদ আব্দুর রাজ্জাকের কবর জিয়ারত, বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। 
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের প্রশাসক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সাতক্ষীরাবাসীর জন্য একটি গৌরবময় দিন। এই দিন শত্র“মুক্ত হয়েছিল সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচির সাথে শনিবার বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ