খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

সরকারি চাকুরিতে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন

|
১১:২৩ এ.এম | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪


সরকারি চাকুরিতে প্রবেশে প্রথম শ্রেণির ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চলছিল অনেক দিন থেকেই। অন্তত প্রথম শ্রেণির চাকরিগুলোতে বয়সসীমা ৩৫ রেখে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না রাখার দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া চাকুরিবিধি পরিবর্তন করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।
এতে একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি সরকারি চাকুরির এই নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারবেন না। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন পরীক্ষার্থী যতবার ইচ্ছা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার সেখানে সীমা টেনে দিল। তবে চাকুরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অর্থাৎ, অবসরের বয়স এখন যা আছে, তা-ই থাকবে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতা বহির্ভূত সব সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর হবে। স্বায়ত্ত¡শাসিত, আধা স্বায়ত্ত¡শাসিত সংস্থায় এ নিয়ম চালু করতে নিজ নিজ নিয়োগ বিধিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।
বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। আমরা সমন্বিত উন্নয়নের দিকে যেতে পারিনি। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করলেও আমরা মানবসম্পদের মানসম্পন্ন উন্নয়ন করতে পারিনি। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মসংস্থান। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটি বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকুরির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। আজকের তরুণদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। এটি ঠিক যে দেশের অনেক তরুণ এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এখন জরুরি। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে দেশ এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মেধা। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম মেধাবী।
সরকারি চাকুরির তুলনায় বেসরকারি খাতের চাকুরি সেভাবে আকর্ষণীয় নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সা¤প্রতিক এক তথ্য বলছে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকুরি পান। ইউএনডিপি তাদের এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অতিক্রম করছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। একটি জাতির জীবনে ডেমোগ্র্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই আসে এবং তা সাধারণত ৩০ বছর স্থায়ী হয়। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের তরুণদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। এটি ঠিক যে দেশের অনেক তরুণ এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এখন জরুরি। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে দেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মসংস্থান। বেকারত্ব ঘুচিয়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে সমাজে আস্থার সংকট কেটে যাবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন।

্রিন্ট

আরও সংবদ