খুলনা | সোমবার | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬ পৌষ ১৪৩১

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক

মহান বিজয় দিবস

|
০৬:৫৬ পি.এম | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪


আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দিন, যেদিন এক দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ৫৪ বছর পর এবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও বিশেষ পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছে জাতির সামনে বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করে এই ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
অবশ্য তার আগের ৯ মাসে তারা হত্যা করেছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকে। নির্যাতিত করেছিল দুই লাখ নারীকে। আজ মহান বিজয় দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি আত্মদানের সেই ইতিহাসকে। 
এই বিজয়ের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা; যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিক সমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবে; যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ সব আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য হবে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 
কিন্তু স্বাধীনতার যে মূল প্রত্যয়, সেই গণতন্ত্রকে আমরা সুসংহত করতে পারিনি। নাগরিক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকগুলো নিম্নমুখী। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও এমন স্তরে নিয়ে যেতে পারিনি, যেখানে সংসদই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যাবে। বিশেষ করে গত সাড়ে ১৫ পনের বছর জাতির কাঁধে চেপে বসেছিল ইতিহাসের সেরা স্বৈরাচার। যাকে আধুনিক বিশ্বের মহাফ্যাসিবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বিগত তিনটি প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন এবং জোর রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্বাধীনতার মূল চেতনা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা,অর্থনৈতিক মুক্তি ও সুশাসনকে নির্বাসিত করে শেখ হাসিনার সরকার। সেই সঙ্গে তেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র মুছে দেয়। কার্যত একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লেবাসে শেখ হাসিনা জাতিকে বিভক্ত করে রাখে। দেশের সর্বস্তরে সৃষ্টি হয় বৈষম্য। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে ফ্যাসিবাদ সরকারের ঘনিষ্টরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করে। মিথ্যা মামলা, হয়রানি, গায়েবি মামলা, গুম, খুন করে জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক বিরোধীতাকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যদিয়ে দমন নীপিড়ন চালানো ছিল ডাল-ভাতের মতো। তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়  আয়না ঘরের মতো নির্যাতনে কুঠির তৈরি করা হয়। একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের সকল উপাদান নিশ্চিত করে শেখ হাসিনার সরকার। দীর্ঘ ১৫ পনের বছর রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার তার দল আ’লীগ একটি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে। জনগণের আওয়াজকে বন্ধ করে পূর্বের ন্যায়ে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাতে থাকে। তেমনি এক পরিস্থিতিতে চাকরীতে কোটা পরিবর্তন ও সকল স্তরে বৈষম্য দূর করার জন্য এদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ অহিংস আন্দোলনে নামে। কিন্তু স্বৈরাচার সরকার নিরস্ত্র ছাত্রদের বুকে গুলি করে। প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা রাজপথে শহিদ হন। আহত হন প্রায় বিশ হাজার। অবশেষে জাতির সেই কাক্সিক্ষত মুক্তি আসে গত ৫ আগস্ট। ওই দিন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশে থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। জাতি মুক্তি পায় ঘড়ে চেপে বসা ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার মুক্ত হলেও সেই সরকারের দোসররা গত ৮ আগস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার গঠনের পর থেকে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। বিচার বিভাগীয় ক্যু, আনসার ক্যু, বিদ্যুতের কম্পিলিট সার্ট ডাউনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পার্টি লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে অস্থিশীল করে তোলে। তার উপর মিথ্যা প্রপাগান্ডা আর সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্প কাহিনী তুলে নেপথ্যে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সব মিলে জাতির ভাগ্যাকাশের কালো মেঘ এখনও দূর হয়নি। চলছে দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র যে কারণে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনও কাটেনি।
স্বীকার করতে হবে, এবারের বিজয় দিবস আমাদের সামনে নতুন এক বাস্তবতা নিয়ে এসেছে। এবার আমরা যখন বিজয় দিবস উদ্যাপন করছি, যখন জাতির নেতৃত্বে আছে ছাত্র-জনতার সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত দিনে ভঙ্গুর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার সে সংস্কার কাজে ব্যস্ত। রাজনৈতিক দলগুলোও দাবিত তুলেছে দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তন করতে। সরকারের কোনো উপদেষ্টাও বলছেন, অতিব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে তারা নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন। আমরাও চাই দেশের মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। এটা হোক এবারের বিজয় দিবসের আশা ও প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

্রিন্ট

আরও সংবদ