খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল : গণতন্ত্রের পথে এক ধাপ অগ্রগতি

|
১২:০৬ এ.এম | ২০ ডিসেম্বর ২০২৪


নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দু’টি ধারা বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। এটি গণতন্ত্রের পথে এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এ রায় দেন। এর মাধ্যমে বহুল আলোচিত ত্রয়োদশ সংশোধনী, অর্থাৎ তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হলো। আদালত একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল করেছেন। 
উলে­খ্য, ২০১১ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিরোধী দলের মতামত উপেক্ষা করে জবরদস্তিমূলকভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে সংসদে যে আইন পাস করে, তা পঞ্চদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। এই সংশোধনীর পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে তিনটি নির্বাচন করে, তা ছিল প্রহসনমূলক। 
এর মধ্যে ২০১৪ সালে ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যা কেবল আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও নজিরবিহীন। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগ আছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকায় তারা আমি-ডামির ভোট করতে বাধ্য হয়। তিনটি নির্বাচনেই জনগণ তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
উলে­খ্য, নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগই আন্দোলন-সংগ্রাম করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় এবং এক্ষেত্রে তারা উচ্চ আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি। 
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিচারিতা করেছেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে তাঁরা আরও দু’টি নির্বাচন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলেছিলেন। অথচ সাবেক প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর লেখা পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেটা পরিবর্তন করে বলা হয়েছিল, সংসদ চাইলে সেটি হতে পারে। আমাদের বিচারিক ইতিহাসে তাঁর এই রায় কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। এর (অন্তর্বর্তী সরকার) সঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন রয়েছে। সেটা আবেদনকারীদের পক্ষে নিষ্পত্তি হলে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরবে।
তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থার ওপর আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের রায় যা-ই হোক, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল, সেটা আর ফিরে আসবে না। উচ্চ আদালতের রায় কিংবা সংসদের আইন দু’টোই হতে হবে বৃহত্তর জনগণের কল্যাণে। কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত সংশোধনী হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে আরও অনেক বিষয় আছে, যে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সম্ভবত বিতর্ক এড়ানোর জন্যই এটি তাঁরা করেছেন। আমরা আদালতের এই বিজ্ঞোচিত সিদ্ধান্তকেও সাধুবাদ জানাই।

্রিন্ট

আরও সংবদ