খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি কন্ট্রোল প্যনেলে মিথ্যে তথ্য দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:৪১ এ.এম | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪


সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রধানের সরকারি কন্ট্রোল প্যনেলে পিডিএস. এআইবি.গভঃ.বিডি/এডমিন এ মিথ্যে তথ্য দিয়ে সরকারকে ধোকা দিয়ে এবং প্রতারণা করে দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে থাকার পায়তারা করাসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে  
স¤প্রতি তথ্য বাতায়নে আনিছুর রহমান (পিডিএস নং : ২০১৬৭০০৬০৭) তার কর্মস্থল সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের তারিখ দিয়েছেন ০৬/০৫/২০২৪ সালে। অথচ তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন ০১/০৯/২০১৩ তারিখে। ওয়েবসাইটের কন্ট্রোল প্যনেলে তথ্য বাতায়নে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে তিনি এই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থাকার পাঁয়তারা করছেন। যা শিক্ষা নীতিমালা বহির্ভূত এবং বেআইনি শাস্তিমূলক অপরাধ। 
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুন্য আছে। বর্তমানে মোঃ আনিছুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মূল পদ সিনিয়র শিক্ষক। তিনি একাধারে সহকারী প্রধান শিক্ষকের (চলতি দায়িত্ব) পালন করছেন এবং প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় যথেষ্ট বিঘœ ঘটছে। তাছাড়া বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৫ জনের বেশি সিনিয়র শিক্ষক কর্মরত আছেন। যেহেতু মোঃ আনিছুর রহমান একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরা তার নির্দেশনা যথাযথভাবে আন্তরিকতার সাথে পালন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়ের হোস্টেলের নিচতলার দু’টি রুমে প্রভাতি শিফটের সিনিয়র শিক্ষক হারাধন কুমার আইচ (পিডিএস নং: ২০১৬৭০৭৩৭৪) প্রাইভেট পড়িয়ে মাসে এক লাখেরও বেশি টাকা উপার্জন করছেন। তিনি প্রভাতী শিফটের শিক্ষক হয়ে দিবা শিফটের ছাত্রীদের সরকারি বাধ্যতামূলক ক্লাস থেকে বঞ্চিত করে হোস্টেলের নিচতলায় প্রাইভেট টিউশনি করেন। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওই টাকার একটি অংশ পান বলে জানা গেছে। শিক্ষক হারাধন কুমার আইচ ১৫ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। 
স¤প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছুর রহমান ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্চারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ৯ম, দশম শ্রেণির মেয়েদের পিঠে থাপ্পর মারাসহ হিজাব ও বোরকা নিয়ে কটূক্তি করেন। যে অভিভাবক প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন ও মাফ চাচ্ছেন, যেন সরকার এখানে কোন প্রধান শিক্ষক পদায়ন না করেন। এতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক ও তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে করে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় যথেষ্ট বিঘœ ঘটছে। 
নাম প্রকশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক জানান, চলতি ২০২৪ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় ৯ম শ্রেণির ইংরেজী প্রশ্নের ৭ দাগের একটা লাইনই ছিলনা, ৪ দাগের কবিতা অংশের প্রথম প্রশ্নটাও ভুল, প্যাসেজ’র বানান ভুল। ৭ম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় দৃশ্যপট ভুল, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাসেও নানাবিধ ভুলে ভরা প্রশ্নে ২০২৪ সালের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় সংশ্লি¬ষ্ট যাকে দিয়ে প্রশ্ন পত্র টাইপ করেছেন তার মেয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখার ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ৯ম শ্রেণির গণিত প্রশ্ন পত্রেও একাধিক ভুল ছিল। এছাড়াও দাগ নম্বর ভুল, ভগ্নাংশের চিহ্ন ভুলসহ বিভিন্ন ভুলে ভরা প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে অতিরিক্ত সময় নষ্টসহ বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হয়রানীর শিকার হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালে একটি সংবাদ ছাপানো হয়।
এদিকে অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রান্তি বিনোদন ভাতা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জনকে তাদের প্রাপ্য শ্রান্তি বিনোদন ভাতা অনুমোদন করেননি। শুধুমাত্র তার তার ঘনিষ্ঠ ২ জন শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন (পিডিএস নং: ২০১৬৭০৭৭৪৪) ও সফিউল ইসলামকে (পিডিএস নং: ২০১৬৭০২৫৯২) শ্রান্তি বিনোদন ভাতা অনুমোদন দিয়েছেন। বাকিদেরকে অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদেটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে প্রতিবাদ দিয়ে আসলে তাদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা অনুমোদন করা হবে জানিয়ে দেয় হয়। 
এছাড়া অনেক শিক্ষক ১২ থেকে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন তারা। 
এ বিষয়ে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকা’র সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও সচেতন মহল। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা বলে জানিয়েছেন। 
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদায়ন করলে সকল সমস্যার সমাধানসহ বিদ্যালয়টিতে পূর্বের সফলতা ও শিক্ষার মান ফিরে আসবে বলে আশা করেন অভিভাবকরা। একই সাথে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। 

্রিন্ট

আরও সংবদ