খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি : ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা তালিকায় বাংলাদেশ

|
১২:২৮ এ.এম | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪


ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ইকোনমিস্ট প্রতি বছর সেরা দেশ বাছাই করে। বাংলাদেশ এবার সেটি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে দেশকে স্বৈরশাসনমুক্ত করায় বাংলাদেশ এ স্বীকৃতি পেল।
এবারের সেরা দেশ বাছাইয়ে ইকোনমিস্টের চূড়ান্ত তালিকায় পাঁচটি দেশ ছিল। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো- সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
ইকোনমিস্ট বলছে, আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, তারা এক স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে। গত আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে ১৫ বছর ধরে শাসন করেন। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমন-পীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ইকোনমিস্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো বলেছে, দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যারা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছেন। এ সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনা ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের স্বৈরশাসক হওয়ার দিকে ধাবিত হয়েছেন। তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে পুরোপুরি স্বৈরশাসকে পরিণত হন তিনি। বিরোধী মত ও পথের কোনো কথা কিংবা ন্যায্য কোনো প্রতিবাদও তিনি সহ্য করতে পারতেন না; বরং তাদের দমনে বেছে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় গুম-খুনের পথ। বানিয়েছিলেন গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর। দেশের ভিন্নমতের গণমাধ্যমকেও তিনি সহ্য করতেন না। ভিন্নমতের গণমাধ্যমগুলো তার ভয়ে তটস্থ থাকতো। তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশের মতো পাঠকপ্রিয় গণমাধ্যম। ভিন্নমতের দু-চারটি গণমাধ্যম থাকলেও এগুলোর ‘টুঁটি’ চেপে ধরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। এসব বিষয় নিয়ে ইকোনমিস্টসহ বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে কর্তৃত্ববাদী শাসক বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার অপশাসনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন যখন একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিল তখন গণতন্ত্রমনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন ছিল সত্যই অবিস্মরণীয় ঘটনা। ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের সেরা হওয়াটা ছাত্র-জনতার স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের বিজয়ের স্বীকৃতি। ইকোনমিস্টের এ স্বীকৃতি অসংখ্য ছাত্র-জনতার শাহাদৎ, পঙ্গুত্ব বরণ ও আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে। এসেছে অগণিত মানুষের বহুমাত্রিক ত্যাগ-তিতীক্ষার মাধ্যমে।
শেখ হাসিনা স্বৈরশাসনের যে বীজ বপন করেছিলেন তার মূলোৎপাটন করে দেশকে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থায় ধাবিত করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া জুলাই-আগস্টের গণহত্যার কুশীলব শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার দেখার জন্যও ছাত্র-জনতা অধীর আগ্রহে এ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার তার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে জনপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাবে- এটিই দেশবাসীর চাওয়া।

্রিন্ট

আরও সংবদ