খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা : দ্রুত সমস্যার সুরাহা জরুরি

|
১২:০৩ এ.এম | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতা ও মেধার বদলে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। তারা জনসেবার জায়গায় দলীয় সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং জনপ্রশাসন থেকে জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে।
কিন্তু গত চার মাসে এ বিষয়ে তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগে আছে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি সুপারিশকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে কমিশন। বর্তমানে প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ২৫টি ক্যাডারের জোট আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদও কমিশনের সুপারিশে ক্ষোভ জানিয়েছে। কলমবিরতি, মানববন্ধন ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জনসেবার মান বাড়ানোর উপায় খুঁজতেই এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন দেবে এবং সরকার বিচার-বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ফলে যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়নি, তা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের তরফে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করার আগে সেখানে কী প্রস্তাব আছে, তা প্রকাশ করা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হয়নি।
যে বিধান নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, সেই বিধানটিকে দৃশ্যত একটি বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। এটা পরিস্কার যে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রাধান্য ধরে রাখতেই বিরোধিতায় নেমেছেন। সরকারি চাকুরিক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আধিপত্য নিয়ে অসন্তোষ নতুন নয়। সম্ভবত সেই বিবেচনা থেকেই সুপারিশে নতুন বিধান রাখা হয়েছিল। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উচিত ছিল প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা অথবা নিয়মতান্ত্রিক পথে কমিশনকে তা জানানো। কিন্তু সেসব না করে তাঁরা যেভাবে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করেছেন, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে জনপ্রশাসনে অসন্তোষ ও উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের স্বৈরশাসন, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে জনপ্রশাসন একটি দলীয় কাঠামোতে পরিণত হয়েছিল। সরকার পতনের পর সেই কাঠামো স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়ে। সেই অবস্থান থেকে জনপ্রশাসনকে পুনর্গঠনের কাজটি সহজ নয়। কিন্তু এরপরও বলতে হয় অন্তর্বর্তী সরকার কাজটি সফলভাবে করতে পারেনি। অনেক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছে। ১০ বছর আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার অনেক সময় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেও দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগে প্রকাশ হয়ে পড়া প্রস্তাবিত একটি বিধান নিয়ে নতুন করে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে যে কায়দায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা আশা করব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকার এই পরিস্থিতি উত্তরণের প্রয়োজনীয় ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ