খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

ভয়েজ অব আমেরিকার প্রতিবেদন

শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নয়াদিল্লির জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

খবর প্রতিবেদন |
১২:৩৯ এ.এম | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪


স¤প্রতি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। ভারত এখনো এ বিষয়ে  কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই বিষয়টি নয়াদিল্লির জন্য একটি বড় কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে।
গত সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত একটি ‘ভারবাল নোট’ পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, ঢাকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ইতিমধ্যে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ অনুরোধের পর এই সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশিষ্ট ফেলো মনোজ জোশি বলেন, ‘হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ দিল্লিকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। যা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ করবে। আর ভারত এই অনুরোধ মেনে নিতে পারবে না। কারণ, তিনি (শেখ হাসিনা) এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।’
উলে­খ্য, গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাঁর নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ মেনে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। কিন্তু রাজনৈতিক অপরাধের এই প্রত্যর্পণ চুক্তি এড়ানোর সুযোগ আছে।
স¤প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মহেশ সাচদেব জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রত্যর্পণ অনুরোধ যেমনভাবে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ বিভিন্ন শর্তে প্রত্যাখ্যান করেছিল, হাসিনাও তেমনি বলতে পারেন-তিনি তাঁর দেশের সরকারকে বিশ্বাস করেন না এবং তাঁর প্রতি অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সাচদেব আরও বলেন, ‘প্রত্যর্পণ চুক্তি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়।’
মহেশ সাচদেব বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যা রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ নাকচ করে। তবে অপরাধমূলক বিষয়গুলো রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, এসব শর্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতে গিয়ে বলতে পারেন যে তাঁর প্রতি অন্যায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ভারত কখনো এই অনুরোধ মেনে নেবে না। হাসিনা ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। দিল্লি তাঁকে ফিরিয়ে দেবে না। তারা সম্ভবত প্রত্যর্পণ চুক্তির কোনো একটি ধারা প্রয়োগ করবে, যাতে তাঁকে ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া না যায়।’
দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সফর করেন। তাঁর এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল করার পথে আশা তৈরি করেছিল। কিন্তু এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
ঢাকা থেকে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করতে চাচ্ছে। এখন যদি ভারত তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফিরিয়ে না দেয়, তবে দেশের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব আরও শক্তিশালী হতে পারে।
ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
একই সঙ্গে ভৌগোলিক ভাবে ভারত এমন একটি অঞ্চলে রয়েছে, যেখানে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি সব সময় উত্তেজনাপূর্ণ থাকে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক দেশটির জন্য উদ্বেগের। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তবে উভয় দেশ দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু সাময়িক অস্বস্তি তৈরি করলেও বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশ সম্পর্কের এই জটিলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার ধারাবাহিকতা এবং পারস্পরিক স্বার্থে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ তৈরি করবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ