খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

আহত সুকানির তথ্যে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে

দীর্ঘদিন বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে জাহাজে ৭ খুন

খবর প্রতিবেদন |
০১:০১ এ.এম | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪


চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এম ভি আল বাকেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় আকাশ মন্ডল ইরফানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাঁকে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার কুমিল­ায় সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে র‌্যাব।
এর আগে মঙ্গলবার দায়ের করা মামলায় জানা যায় ওই জাহাজে আটজন নন, ৯ জন ছিলেন। আর ওই ব্যক্তি হলেন আকাশ মন্ডল ইরফান। কথা বলতে অপারগ সুকানি জুয়েল লিখে এ তথ্য জানান।
পরে গতকালই ৭ জনকে খুনের ঘটনায় মামলা করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলকে।
বাদী মামলার এজাহারে আহত ও খুন হওয়া ব্যক্তিদের নাম উলে­খ করেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন-মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার মোঃ সজিবুল ইসলাম, লস্কর মোঃ মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, সালাউদ্দিন, আমিনুর মুন্সী ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত হয়েছেন সুকানি মোঃ জুয়েল।
মামলার বাদী মাহবুব মুর্শেদ এজাহারের বিবরণে উলে­খ করেন, আহত জুয়েলের গলায় জখম থাকায় কথা বলতে না পারায় ডাকাত দলের বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাত দল দেখলে চিনবেন বলে ইশারায় জানায়। তবে জাহাজে ৯ জন ছিল বলে লিখে জানিয়েছেন জুয়েল। ৯ নম্বর ব্যক্তির নাম ইরফান। তবে তাঁর ঠিকানা দিতে পারেনি। ঘটনার পর পুলিশ ওই জাহাজ পরিদর্শনের সময় একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দু’টি স্মার্টফোন, দু’টি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সিল, একটি হেডফোন, এক মুঠো ভাত ও এক টেবিল চা চামচ তরকারি জব্দ করে বলেও এজাহারে উলে­খ।
নৌ-পুলিশ জানিয়েছে, আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে জাহাজে খুন হওয়া ৬ জনের মরদেহ মঙ্গলবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন ও নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। ওই সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবে বাবুর্চি রানা কাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মহিউদ্দিন সুমন বলেন, রাতে ৩৯৬ / ৩৯৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ । মামলা নম্বর (১৭ / ১৬৬)।
দীর্ঘদিন বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ : এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলো র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। বাহিনীটি জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে ওই সাতজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করে জাহাজেরই আরেক স্টাফ। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
সাত খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। এদিন রাতেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আকাশ মন্ডল ইরফান নামে একজনকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে র‌্যাব দাবি করে, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কোনো প্রকার বেতন-ভাতা দিতেন না। এমনকি তিনি দুর্ব্যবহারও করতেন। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করেন।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন সুকানি জুয়েল।
গ্রেফতারকৃত ইরফানের দেওয়া তথ্য মতে র‌্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করতে ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিনি তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সেটি জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল।
র‌্যাবের দাবি, হত্যার দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।
ইরফানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে র‌্যাবের দাবি, ইরফান যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে ট্রলার চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যান।
র‌্যাবের ভাষ্য, মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সময় অন্যরা দেখে ফেলায় ইরফান জাহাজের সবাইকে হত্যা করেন।
৭ দিনের রিমান্ডে : চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটের কাছে সার বোঝাই এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর নৌ পুলিশের পরিদর্শক মোঃ কালাম খা চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের এপিপি এড. শরীফ মাহমুদ সায়েম বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
জামিন শুনানিকালে এপিপি এড. শরীফ মাহমুদ সায়েম, মাসুদ প্রধানীয়া, ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম, শাহজাহান খান এবং আইনজীবী শামিম হোসেন, মিল্টন ও তোফায়েল উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজ আল বাখেরা থেকে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে নিলে আরও দু’জন মারা যান।

্রিন্ট

আরও সংবদ