খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

বাগেরহাটে জনভোগান্তি লাঘবে স্বেচ্ছাশ্রমে ভেড়িবাঁধ নির্মাণ, খুশি স্থানীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট |
০১:৩৩ এ.এম | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪


কাক ডাকা পৌষের ভোর। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করছেন একদল মানুষ। শীতের কষ্ট উপেক্ষা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বুধবার সকাল ৭টায় বাগেরহাট সদর উপজেলার ভৈরব নদী সংলগ্ন বিষ্ণুপুর গ্রামের একাংশের দৃশ্য এটি। দুপুর নাগাদ প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ দৃশ্যমান হয় ওই এলাকায়। বাগেরহাট সদর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁধ নির্মাণে অংশ নিয়েছেন তারা। উদ্দেশ্য একটাই এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের দুর্ভোগ লাঘব।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপকূলীয় জেলা হওয়ায় জোয়ারের পানি বেড়ে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয় নিয়মিত। তবে বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের লাগোয়া ভৈরব নদীর বাঁধের দুই কিলোমিটার অংশ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ভোগান্তিতে ছিলেন ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার। লোনা পানিতে নষ্ট হয়েছে ফসলের ক্ষেত, কাঁচাঘর, মাটির পথ। প্রায় ১৬ বছর ধরে  সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। দীর্ঘদিন পরে হলেও জামায়াত ইসলামীর কর্মীদের এই উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী।
বিষ্ণুপুর গ্রামের বৃদ্ধ শিকদার আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, বহু বছর আগে নদী ভাঙনে গ্রাম রক্ষাবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এরপর প্রতিবছর বর্ষার মৌসুম জুড়ে জোয়ার-ভাটার পানির উপর নির্ভর করে চলতে হয় আমাদের। লোনা পানিতে বন্ধ হয়ে গেছে পানের বরজ, মাছ চাষ, ফসল ফলাদী। আমাদের দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই। 
শেখ জিন্নাত হক বলেন, প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ না থাকায় সামাজিক ও আর্থিক ভাবে পুরো এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত। কেউ অসুস্থ হলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কেউ মারা গেলে জানাজায় অংশ নিতে আসতে পারে না। অনেক সময় মেহমান আসতো না বেড়াতে। আজকে জামায়াত ইসলামের উদ্যোগে বাঁধ দিয়েছে এতে আমরা খুশি। তবে সরকার চওড়া বাঁধ নির্মাণ করে দিলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হতো বলে দাবি করেন তিনি।
জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ বাগেরহাট সদর উপজেলা শাখার আমীর মাওলানা ফেরদৌস আলী বলেন, যাত্রাপুর ইউনিয়ন জামায়াতের নায়েবে আমীর হাফেজ আব্দুর রহমানের বাড়ি বিষ্ণুপুর গ্রামে। তিনি গেল ২৬ মে মারা যান। কিন্তু রাস্তা ও বাঁধ না থাকায় অনেকের ইচ্ছে থাকলেও তার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। তখনই আমরা এলাকার মানুষের এই ভোগান্তি লাঘবের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সবার সাথে আলোচনা করে আজকে আমরা বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছি। বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া, বিষ্ণুপুর, ষাটগম্বুজ, বারুইপাড়া ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বাঁধ নির্মাণ কাজে অংশ নেয়। স্বেচ্ছাশ্রমে আমরা এই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়ায় ফসলি জমি ও জলোচ্ছ¡াসের ঘরবাড়ি প্লাবিতসহ নানা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করেন তিনি।

্রিন্ট

আরও সংবদ