খুলনা | রবিবার | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫ পৌষ ১৪৩১

গাজা পরিস্থিতি : এই মৃত্যুর মিছিল, এই শীতল নরক

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৬ এ.এম | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪


গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মধ্য গাজার দায়ের আল বালাহর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন স্বামী হারা ফাদিয়া নাসের। তিনি জানান, সকালের নাশতার জন্য একটি সবজির স্যান্ডউইচ ছাড়া তাঁর কাছে আর কিছুই নেই। মধ্যাহ্নভোজে একটি টমেটো তিনি মেয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেয়েছেন। দক্ষিণ গাজার একটি আশ্রয় শিবিরের তাঁবুতে থাকেন লুলু। একসময় তিনি গাজা সিটিতে কফি বিক্রি করতেন। লুলু বলেন, কিডনি রোগে ভুগছি। কিন্তু পরিষ্কার পানি পানের সুযোগ নেই। চিকিৎসক বলেছেন, বিশুদ্ধ পানি পান না করলে অবস্থার অবনতি হবে। 
গাজায় এখন শীতকাল। শীতল বাতাসের ছোবলে দুর্বিষহ গৃহহীন লাখ লাখ মানুষের জীবন। শিশুরা মারা যাচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগে। তাঁবুতে বালুর ওপর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকছেন উপত্যকার মানুষ। আর এসবের মধ্যেই বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার উত্তরাঞ্চলের বাইত লাহিয়ায় থাকেন ওলা মোয়েন। ইসরায়েলের ক্রমাগত বিমান হামলার ভয়ে তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেন না। গত অক্টোবরে ইসরায়েলে বিমান হামলায় তাঁর ৯ বছরের ভাগ্নের পা পুড়ে যায়। তাঁর ওষুধ ও ক্রিমের প্রয়োজন, যা তিনি জোগাড় করতে পারছেন না। 
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনার মধ্যেই এখন মানবিক পরিস্থিতি চরম খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ১৪ মাসের আগ্রাসনে গাজার সব শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৯০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। আর এসবের মধ্যেই ঠান্ডার ছোবল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে এক চিকিৎসক জানান, গত সপ্তাহে তাঁবুতে ঠান্ডায় চার নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় পুরো উপত্যকার মানুষ ভুগছেন। 
জাতিসংঘ গত নভেম্বরে জানায়, গাজার ১৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছেন। অনেক স্থানে ত্রাণের সরবরাহে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে গাজায় গত ১৪ মাসে ৬ লাখ ৬৯ হাজার জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। জন্ডিস শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার জনের। এ দু’টি রোগই পানিবাহিত। 
আলজাজিরা জানায়, এরই মধ্যে উত্তর গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সেখানে বাসিন্দাদের খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এ পরিস্থিতিতে আইডিএফ গাজার একমাত্র সচল থাকা হাসপাতাল কামাল আদওয়ানে আগুন দিয়েছে। তারা হাসপাতাল থেকে রোগী ও চিকিৎসকদের বের করে দেয়। 
হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া বলেন, অনেক চিকিৎসক ও স্টাফকে ধরে নিয়ে গেছে আইডিএফ। যারা বের হতে পারেননি, এমন অনেক হাসপাতাল স্টাফ পুড়ে মারা গেছেন। আটকদের অর্ধনগ্ন করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 
গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল-রিশ জানান, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এখন শূন্য। সেখানে কোনো কার্যক্রম চলছে না। গাজায় ৩০ বছর কাজ করেছেন নরওয়ের এমন একজন সার্জন অসলো থেকে বলেন, উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটিকেও খালি করে দিয়েছে ইসরায়েল। তারা এতটাই নীচে নেমেছে, এখন রোগী, হাসপাতালের স্টাফ, চিকিৎসাকর্মী ও গাজার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। 
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, শনিবার এক দিনে আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৪৩৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এখনও অব্যাহতভাবে সেখানে হামলা চালানো হচ্ছে। ৫ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ