খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০২ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

২০ হাজার টাকা দিয়েও রক্ষা পায়নি পলাশ

অভয়নগরে সাবেক কাউন্সিলর আ’লীগ নেতাকে অপহরণের পর কুপিয়ে হত্যা, আটক ১

অভয়নগর প্রতিনিধি |
০১:৩৫ এ.এম | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪


যশোরের অভয়নগরে জিয়া উদ্দিন পলাশ (৪৯) নামে সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাকে অপহরণের পর পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বেঙ্গল রেলগেট সংলগ্ন সাইদুর রহমান ঘাটের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রইস উদ্দিন (৩৮) নামে এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। 
নিহত জিয়া উদ্দিন পলাশ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি একই ওয়ার্ডের নওয়াপাড়া মডেল কলেজ সংলগ্ন মৃত ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। আটক রইস উদ্দিন একই ওয়ার্ডের রেলবস্তির সিদ্দিক শিকদারের ছেলে। হত্যাকারীরা স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি’র কর্মী বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।  
নিহতের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান লেলিন বলেন, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী রইস উদ্দিন তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে বড়ভাই পলাশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। প্রথমে অপহরণ, তারপর টাকা নিয়ে ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিত্যক্ত ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। বাবা হত্যার বিচার মেলেনি, ভাই হত্যার বিচার মিলবে কি? এমন প্রশ্ন করে কাঁদতে থাকেন তিনি। 
নিহতের স্ত্রী শারমিন নাহার রতœা বলেন, ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় তেঁতুলতলা জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় পলাশ। এ সময় বড় ছেলে তাহসিন (১০) ও নয় মাস বয়সী ছোট ছেলে তাইফকে আদর করেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রইজ উদ্দিনের সহযোগী জিহাদ ও সোহাগ বাড়িতে আসে। তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে পলাশের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলেন। এ সময় মোবাইলে কথা হলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পলাশ বলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। যেভাবে সম্ভব ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে ওই দুই যুবকের কাছে দিয়ে দাও। তা না হলে তারা আমাকে খুন করবে বলে মারপিট শুরু করেছে। তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছে প্রশ্ন করলে অপর প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।  
তেঁতুলতলা জামে মসজিদের মুসলি­রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষে সাবেক কাউন্সিলর পলাশ মসজিদ থেকে বেরিয়ে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় একটি ভ্যানে রইস উদ্দিনসহ পলাশকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারি পলাশকে অপহরণের পর পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পলাশ হত্যার সঙ্গে জড়িত এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে বেপরোয়া। তাদের নির্যাতন ও চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হামলা ও মারপিটের শিকার হতে হয়। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে না।     
এলাকাবাসী জানায় সাবেক কাউন্সিলর পলাশ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পর খোঁজাখুঁজি শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে বেঙ্গল রেলগেটে পৌঁছালে রইস ও তার সহযোগীরা চিৎকার করে বলে, আওয়ামী লীগের একটারে খেয়ে ফেলেছি, দেখি কারা উদ্ধার করতে আসে। সেই সময় বেঙ্গল রেলগেটের পাশে সাইদুর রহমান ঘাটের একটি পরিত্যক্ত ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় পলাশের সন্ধান মেলে। দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর উত্তেজিত এলাকাবাসী রইসকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। এ সময় তার সহযোগীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।  
রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ শোভন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মৃত অবস্থায় সাবেক কাউন্সিলরের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। দেখে মনে হয়েছে নিহতের শরীরে লাঠি দিয়ে পেটানো ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। অতিরিক্ত আঘাতজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।   
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এমাদুল করিম বলেন, সাবেক কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন পলাশকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রইস উদ্দিন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। গণধোলাইয়ের শিকার ওই যুবককে পুলিশ হেফাজতে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়। নিহতের স্ত্রী শারমিন নাহার রতœা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। অন্যান্য অপরাধীদের আটকে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রবিবার  মাগরিবের নামাজ শেষে তেঁতুলতলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত জিয়া উদ্দিন পলাশের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।   

্রিন্ট

আরও সংবদ