খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০২ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার রোমাঞ্চকর জয়, ভারতীয়দের তোপে বাংলাদেশি সৈকত

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০২:১৫ পি.এম | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪


তখনো পঞ্চম দিনের ২০ ওভারের মতো খেলা বাকি। টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৪ উইকেট। ভারতের লক্ষ্যটা অবশ্য অনেকটা নাগালের বাইরে। ম্যাচ জিততে তখনো করতে হতো আরও ২০০ রান। জয়ের হিসাবটা বাদ দিলে বলা চলে ড্রয়ের জন্যই তখন খেলছিল সফরকারীরা।

সেই ড্র তারা শেষ পর্যন্ত করতে পারবে কি না, সেটিও অনেকটা নির্ভর করছিল ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের ওপর। বাকি ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রাখছিলেন তারকা এই ওপেনার। টিকে ছিলেন ব্যক্তিগত ৮৪ রান নিয়ে।

ম্যাচের এমন মুহূর্তে উইকেটের পেছনে বিতর্কিত ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন জয়সওয়াল। ভারতীয় ওপেনারের আউটের সঙ্গে জুড়ে গেছে বাংলাদেশের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের নামও।

জয়সওয়ালের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতীয় টেলএন্ডার ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে রোহিত শর্মাদের ইনিংস শেষ হয়ে যায় মোটে ১৫৫ রানে। যার মধ্যে একা জয়সওয়ালেরই ৮৪। রোমাঞ্চকর মেলবোর্ন টেস্টে ১৮৪ রানের জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া।

শেষ দিনে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৩৪০ রান। চতুর্থ ইনিংসের বিচারে লক্ষ্যটা অনেক কঠিন। এ ছাড়া এমসিজির টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে। যা ছিল ৯৬ বছর আগে, ১৯২৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ওই রান তাড়ায় সফল হয়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এরপর আধুনিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২৩১ রান চেজ করেছিল ইংল্যান্ড। ২০১৩ সালে অজিদের দেওয়া সেই রান তাড়ায় ইংলিশরা জয় পেয়েছিল। অর্থাৎ, ভারতকেও টেস্টে জিততে ইতিহাস গড়তে হতো অজিদের বিপক্ষে।

অবশ্য একমাত্র যশস্বী ছাড়া কেউই স্বাগতিক বোলারদের সামলাতে পারলেন না। জয়সওয়ালের আউট নিয়েও ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ। ঘটনার সূত্রপাত প্যাট কামিন্সের ৭১তম ওভারে। অজি অধিনায়কের বাউন্সার বলে ফাইন লেগে খেলতে চেয়েছিলেন জয়সওয়াল। তবে বল জমা পড়ে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির কাছে। ক্যাচের আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। মাঠের আম্পায়ার দেন আউট দেননি। কামিন্স রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত যায় তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার কাছে।

রিভিউ নেওয়ার রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট ও গ্লাভস ছুঁয়েছে। শরফুদ্দৌলাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জানান, তিনি স্পষ্ট করেই দেখতে পেয়েছেন বলের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। তবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি স্নিকোর সাহায্য চান। কিন্তু স্নিকোগ্রাফে পরিবর্তন আসেনি। তাতে অবশ্য বাংলাদেশি আম্পায়ারের মন গলেনি। ঠিকই দিলেন আউটের সিদ্ধান্ত।

মাঠেই আম্পায়ারদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন জয়সওয়াল। উইকেট ছাড়তে ছাড়তেও কিছু একটা বলেছেন তিনি। ধারাভাষ্যকারদের অবশ্য পাশে পেয়েছেন শরফুদ্দৌলা। হার্শা ভোগলে ও মার্ক নিকোলাসরা এটাকে ‘সাহসী ও ন্যায্য’ সিদ্ধান্তই বলেছেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল সেভেনে আউটের সিদ্ধান্তের পক্ষেই মত দিয়েছেন অভিজ্ঞ আম্পায়ার সাইমন টোফেল।

জয়সওয়ালের সেই আউটের পর ভারতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে তাসের ঘরের মতোই। আকাশ দীপ, জাসপ্রীত বুমরাহরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দিনের খেলা বাকি ছিল ১০ ওভার। তখনই শেষ হয়েছে ভারতের ইনিংস। জয়সওয়ালের পর আকাশ দীপের আউটেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সৈকতকে। অন-ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দিলেও সৈকতের হাত ঘুরে ঠিকই প্যাভিলিয়নে যেতে হয়েছিল ভারতীয় বোলারকে।

ভারতের বিপর্যয় শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। মেলবোর্নে চতুর্থ দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৮। শেষ উইকেটে উঠেছিল ৫৫ রান। পঞ্চম দিনে অবশ্য সেটা আর বেশি দূর এগোয়নি। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস থামে ২৩৪ রানে। ৫ উইকেট শিকার করেন জশপ্রীত বুমরাহ। তাতেও ভারতের জন্য ৩৪০ রানের বিরাট লক্ষ্য রেখেছিল অজিরা।

যদিও দরকার ছিল ভালো শুরু। কামিন্সের বল চালাতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন রোহিত (৯)। ওই ওভারেই কামিন্স আউট করলেন কেএল রাহুলকে (০)। দুই উইকেট হারিয়ে তখন প্রবল চাপে ভারত। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব যিনি নিতে পারতেন, সেই বিরাট কোহলিও ফিরলেন মাত্র ৫ রানে। আর সেই অফ স্ট্যাম্পের বলে খোঁচা দিয়ে।

সেখান থেকে যশস্বী-পন্ত জুটি ভারতের ইনিংস টানতে থাকে। কিন্তু পন্ত ফিরতেই শুধু যাওয়া-আসা ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপে। জাদেজা ফিরলেন ২ রানে। আগের ইনিংসে সেঞ্চুরির নায়ক নীতীশ কুমার রেড্ডির এদিনের সংগ্রহ মাত্র ১।  যশস্বীর আলোচিত ক্যাচ আউটের পর ভারতের সব আসাও শেষ হয়ে যায়।

্রিন্ট

আরও সংবদ