খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

খবর প্রতিবেদন |
০৬:২২ পি.এম | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র নেই। আমরা বলেতে চাই, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আপনারা ঘোষণাপত্রের পক্ষে জেলায়, মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন। তাদের কথা শুনবেন যে তারা কী বলতে চায়।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আমাদের সংগ্রাম জারি থাকবে। আবার দেখা হবে ১৫ জানুয়ারি ঘোষণাপত্র নিয়ে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বলতে চাই, অবিলম্বে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে।

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। বাংলাদেশের মানুষের অসংখ্য চাওয়া আছে, আগামীর নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তাদের সেই চাওয়াগুলো পূরণ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে এখনো খুনির দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে এখনো কীভাবে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা হয়? যদি আমাদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না। আমরা দেখছি ছাত্রলীগ যুবলীগ এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা আমাদের আহতদের দেখে মুচকি হাসে। আমরা যদি বিচার করতে না পারি, তাহলে শহীদের আত্মাকে আমাদের জবাব দেওয়ার কিছু থাকবে না।

সারজিস আলম বলেন, আমরা দেখছি দেশের প্রতিটি জায়গায় পূর্বের মতোই সিন্ডিকেট রয়ে গেছে। এগুলো আমাদেরকে ভাঙতে হবে। কেন এখনো শুনবো একহাত থেকে আরেক হাতে সিন্ডিকেট স্থানান্তর হচ্ছে। কেন সেই হাতগুলো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে না?

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে কেউ যদি আমাদের ওপর মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, সেই মাথা আমরা মাটিতে নামিয়ে আনবো। আমাদের বিপ্লবীরা কেউই ঘরে ফিরে যায়নি। আমাদের যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, সেগুলো আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন করতে চাই।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সচিবালয়ের ভেতরে দালালগুলো ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশ প্রশাসনের অসংখ্য দালাল ঘাপটি মেরে আছে। এই জায়গাগুলো দ্রুত দালালমুক্ত করুন।

তিনি বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের ৫ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আমরা দেখতে পাইনি। এই বিপ্লবের স্বীকৃতি আমরা চাই। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দ্রুততম সময়ে আমরা দেখতে চাই।

সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে?

এই সমন্বয়ক বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজও হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের পাঁচ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান।

এর আগে বিকেল ৪টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি' কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল আর ব্যানার, পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হয়।

তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ', ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস, জাস্টিস, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ'-এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিকেল তিনটার আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর মঞ্চ থেকে স্লোগান শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে একজন শহীদের বাবার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ