খুলনা | শনিবার | ০৪ জানুয়ারী ২০২৫ | ২১ পৌষ ১৪৩১

মার্চ ফর ইউনিটির ঢাকামুখী গাড়িবহরে হামলা, রণক্ষেত্র মোল্লাহাট : আহত ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ও মোল্লাহাট প্রতিনিধি |
০২:৫৪ এ.এম | ০১ জানুয়ারী ২০২৫


বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের মোল্লাহাট মাদ্রাসাঘাট এলাকায় শিক্ষার্থীদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গাড়ি থামিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রায় দুই ঘন্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়। আড়াই ঘন্টা পরে ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 
এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন ও মোল­াহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর আহত চারজনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন শাফিন, রাহি, ইয়াছির ও মোঃ রাফসান জানি। রাফসানের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়েছে। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোঃ রফিকুজ্জামানের পুত্র রাফসান জানি এর আগেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে খুলনায় গুলিবিদ্ধ হয়। 
শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে খুলনা মহানগর থেকে ২৫টি গাড়ি “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি” তে যোগ দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোল্লাহাট অতিক্রম করার সময় সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের স্থানীয়রা সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের দাবি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গাড়ি বহরে হামলা করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে। এর বিচার অতিদ্রুত করতে হবে, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে জড়িতদের খুঁজে বের করবে। 
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে শিক্ষার্থীদের একটি বাসের সাইড দেওয়া নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। যাত্রীবাহী বাসের চালক ও হেলপারের সাথে শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা হয়। ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসটি মাদরাসা ঘাট এলাকায় থামিয়ে সেখানে থাকা কাউন্টারের লোকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাড়ি থামায়। শিক্ষার্থীদের মারধর করে এবং তাদের গাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। এর মধ্যে গাড়ির ভিতরে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে এবং পিছনে থাকা কয়েকটি গাড়িতে শিক্ষার্থীরা চলে আসলে ব্যাপক সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। বাস শ্রমিক ও কাউন্টার সদস্যদের সাথে স্থানীয় বাসিন্দারাও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। শিক্ষার্থী তিনটি মোটরসাইকেল ও স্থানীয়দের দোকানপাট ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর বলেন, খুলনা থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের বহর ঢাকায় যাচ্ছিলো। পথে আমাদের উপর হামলা করে। অনেকে আহত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা এই আক্রমণ করেছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মূলত ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে সাইড দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি বাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাদ্রাসাঘাট এলাকায় ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারের সদস্যরা এবং ওই বাসের চালক-হেলপার শিক্ষার্থীদের গাড়িতে হামলা করে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরও করে তারা। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে এবং শিক্ষার্থী বহনকারী আরও গাড়ি আসলে বড় সংঘর্ষে রুপ নেয়। 
চালক মনির জানান, শিক্ষার্থীদের গাড়ি বহরের একটি গাড়ি পিছনে পড়ে যায়। ফকিরহাটের নওয়াপাড়া এলাকা থেকে শুরু করে মোল­াহাটের একটি পাম্প পর্যন্ত ওই গাড়িটিকে একটি যাত্রীবাহী বাস বার বার চাপ দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে ওই গাড়ির লোকদের সাথে শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা হয়। ওই গাড়ির লোকজন এবং স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে এবং শিক্ষার্থীদের বহনকারী সেবা গ্রীন লাইন গাড়িটির গ্লাস ভাঙচুর করে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। 
মোল­াহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মোল­াহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ জন এবং ফকিরহাটে ৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি।  শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। ঢাকা থেকে ফেরার পথে তারা মামলা করার কথা জানিয়েছেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ তৌহিদুল আরিফ জানান, ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল। ওই পরিবহনের লোকদের কাছে জানতে চাইলে, তারা শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়। স্থানীয় কাউন্টারের লোকজন শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা ৫ জন আহতের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থল এখন শান্ত রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ