খুলনা | রবিবার | ০৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২১ পৌষ ১৪৩১

লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্যে তারেক রহমান

‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন’

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৯ এ.এম | ০২ জানুয়ারী ২০২৫


রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যে তর্ক বলে মনে করে। বরং বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। 
বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই রূপ দিতে নির্বাচন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের যে সুযোগ পায়, যেটি রাষ্ট্র জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষমতা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছু টেকসই হয় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এই কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার হাতে নিয়েছে। তবে এসব সংস্কার কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা বাড়তে থাকলে জনগণ হয়তো সরকারের সংস্কার নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে। 
তিনি আরও বলেন, সরকার তাদের সংস্কার বা গৃহীত পরিকল্পনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ষড়যন্ত্রকারীরা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিকবার দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
‘বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারও নাম উলে­খ না করে তিনি বলেন, ‘কী করে যারা সত্যিকারে বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে “সবার আগে বাংলাদেশ” সেই দলকে, সেই নেতাকে তারা দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এই চক্রান্ত বহুবার হয়েছে, আজকে আবার শুরু হয়েছে।’
এই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংকটের কথা উলে­খ করে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘এই সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এটা ইতিহাসে প্রমাণিত। আমরা সে কথাই বারবার বলে আসছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার সেই চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যেটা অতীতেও হয়েছে বহুবার। বাংলাদেশ নিয়ে আবার দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যারই ফলে আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে, যার ফলে তারেক রহমানকে এখনো পর্যন্ত বিদেশে থাকতে হচ্ছে। এই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।’
এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলে জানিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিনই তাদের চক্রান্ত সফল হতে দেবে না। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে। কখনোই ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। বিগত তথাকথিত নির্বাচনের সময়ও চেষ্টা হয়েছে, একটা ছাড়া দুইটা লোককে তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। কারণ, বিএনপি’র যে রাজনীতি, এটা এ দেশের মানুষের রাজনীতি। সে রাজনীতি কী, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র এই তিনটি জিনিসের ওপর বিএনপি’র রাজনীতি, মূল ভিত্তি।’
মির্জা ফখরুল আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যাতে গণতন্ত্রকে বিঘিœত করবে। সরকারের প্রতি আহŸান জানাতে চাই আর বিলম্ব না করে অনুগ্রহ করে অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরাই তৈরি করেছি। আমরা আশা করছি যে অন্তর্বর্তী সরকার ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, অর্থাৎ আমাদের নির্বাচন সংক্রান্ত যে সংস্কার, একটা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসনযন্ত্রকে ঠিক করা, বিচার ব্যবস্থাকে সংস্কার করা এবং ন্যূনতম অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো করা। তার মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে থেকে পালাতে বাধ্য করা দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি’র মহাসচিব।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্রদল হচ্ছে আমাদের ভ্যানগার্ড। তাদের এখন জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন, আমাদের সাইবার যুদ্ধ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান বেশি করে রাখতে হবে। এটি যদি করতে না পারি, তাহলে আমরা এই যুদ্ধে হেরে যাব। মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমাদের এ্যাকটিভিটি বাড়াও। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মেধা-বুদ্ধি দিয়ে রুখে দাঁড়ানো।’
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন। এ ছাড়া সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে শামসুজ্জমান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল­াহ আমান, খায়রুল কবির, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদউদ্দীন চৌধুরী, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া, হাবীবুর রশীদ, বিএনপি’র ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ