খুলনা | রবিবার | ০৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২২ পৌষ ১৪৩১

সুন্দরবনে হরিণ শিকার : বিদায়ী বছরে ৯৫ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার, গ্রেফতার ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:১৩ এ.এম | ০৩ জানুয়ারী ২০২৫


সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা হরিণ শিকারীরা। বৈধ বা অবৈধভাবে বনে ঢুকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা গুলি করে অথবা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার অব্যাহত রেখেছে। শিকার করা এসব হরিণের মাংস কৌশলে লোকালয়ে এনে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বনবিভাগের অভিযানে মাঝে মধ্যে কিছু মাংস ধরা পড়লেও অধিকাংশ থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বনবিভাগের অভিযানে গত এক বছরে সাতক্ষীরার রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৫ কেজি ৫০০ গ্রাম হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ১৩টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২০জন চোরা শিকারীকে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৫০০টি হরিণ শিকারের ফাঁদ।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে হরিণ রক্ষা প্রকল্প চলমান। হরিণ সুরক্ষায় সুন্দরবনে বনবিভাগের চারটি কেল­া আছে। তথ্যদাতা, উদ্ধারকারি, আসামি ধরিয়ে দেওয়া ছাড়াও লোকালয়ে আসা হরিণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই হরিণ রক্ষা প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে।
সুন্দরবনে মায়া হরিণ ও চিত্রা হরিণ নামে দুই প্রজাতির হরিণ পাওয়া যায়। মায়া হরিণের সংখ্যা কম, চিত্রা হরিণের সংখ্যা বেশি। হরিণ বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০২৪ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বনবিভাগের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ২০জন চোরাশিকারী। পলাতক রয়েছে চারজন। এক বছরে ৯৫ কেজি ৫০০ গ্রাম হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর চার মাস ২৫ দিনে ৭৮ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়। এছাড়া গত এক বছওে একটি মৃত হরিণ, একপিস হরিণের চামড়া, ১৫০০টি হরিণ মারা ফাঁদ ও ৫০০ গ্রাম হরিণের কলিজা জব্দ করা হয়।
সুন্দরবনে কর্মরত কয়েকজন জেলে ও মৌয়াল নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এ সময় শিকারীরা অনেকেই অন্য পেশায় চলে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর প্রশাসনিক দুর্বলতা বিশেষ করে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ নিজেদের দুর্বল বোধ করায় চোরা শিকারীরা আবারো বনে ঢুকতে শুরু করে। এদের মধ্যে অনেকে রয়েছে বনদস্যু।
তারা আরো বলেন, মাঝে মাঝে চোরা শিকারীরা গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি হরিণের মাংস ও ফাঁদ উদ্ধার করা গেলেও বড় অংশের চোরা শিকারীরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়া ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা কারাগার থেকে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ৮৭ জন আসামির মধ্যে একটি অংশ নিজেদের রক্ষায় সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে। তাদের কেউ কেউ সুন্দরবনের ভারতের অংশে পালিয়ে গেছে।
এছাড়া শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর থানায় লুট হওয়া সরকারি ও জনগনের লাইসেন্সকৃত বন্দুক নিয়ে গাবুরা, পদ্মপুকুর, হরিনগর, রমজাননগর, পাইকগাছা ও কয়রাসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুদের একটি অংশ সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করছে। তারা খাদ্য সংগ্রহ করতে হরিণ শিকার করছে। তারা জেলেদের নৌকা থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। ভয়ে অনেকেই এখন পাস নিয়ে মধু সংগ্রহ বা মাছ ধরতে বনে যেতে সাহস করছে না।
এ ব্যাপারে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান জানান, সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ ও বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি রোধ ও বনজীবিদের নিরাপত্তায় বনবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় খুব শিগগিরই বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ