খুলনা | মঙ্গলবার | ০৭ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

কনকনে শীতেও সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়

মোংলা প্রতিনিধি |
০৬:১১ পি.এম | ০৪ জানুয়ারী ২০২৫


পৌষের শেষে সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপকূলে কনকনে শীতে কাঁপছে মানুষ। গত তিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় বেশি দূর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তবে উল্টো চিত্র সুন্দরবন ভ্রমণপিপাসুদের। ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন দেখতে ছুটে এসেছেন। সুন্দরবনকে কিভাবে সাজিয়েছে প্রকৃতি, তা দেখতে ছুটে এসেছেন বিদেশী পর্যটকরাও।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ও শনিবার (৪ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির এ দু’দিনে সুন্দরবনের প্রধান পর্যটন স্পট করমজলে পর্যটকদের ভিড় ভেড়েছে। আগত পর্যটকেরা ট্রলার ও লঞ্চে করে বনের নানা প্রান্তে গিয়ে উপভোগ করেছেন প্রাকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের সৌন্দর্য। আজ শনিবারও পর্যটকদের ভিড় সামলাতে বনরক্ষীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে পর্যটনকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানায়।

সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পটে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রঞ্জন মজুমদার বলেন, অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার। শুধু বই পড়ে পড়ে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় না। আমরা এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না সুন্দরবন আসলেই কত সুন্দর ! পরতে পরতে বৈচিত্র্য আমাদের হাতছানি দিয়েছে। অনেক কিছু শেখার আছে এখান থেকে।

ঢাকা থেকে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা কয়েকজন ক্ষুদে স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, সুন্দরবনে এসে তারা সবাই খুশি। ওয়াচ টাওয়ারে চড়ে তারা অনেকদূর পর্যন্ত সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছে।

উত্তরের জেলা নারায়নগঞ্জ থেকে আসা শাওকাত চৌধুরী বলেন, আগে কখনো সুন্দরবনে আসা হয়নি। প্রথমবারের মতো প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে করমজলে এলাম। বনের ভেতর ঘুরে দেখলাম অনেক কিছু। মনটা ভরে গেছে।

করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির জানান, দেশজুড়ে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যেও এত পর্যটক আসবে, তা ভাবতে পারিনি। যেহেতু পর্যটক মৌসুম তাই পর্যটক আসবে। তাছাড়া টানা দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাত হাজার পর্যটক এসেছেন এখানে। তাই অন্যান্য দিনের চেয়ে রাজস্ব ভালো আদায় হবে বলেও জানান তিনি।  

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভালো তাই এখন থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার পর্যটক আসবে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ হবে উল্লেখ করে বন কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, চারদিকে ঘন সবুজ পরিবেশের মাঝে বুঁদ হয়ে থাকার নেশায় যেকোনো পর্যটেকরই পছন্দের স্থান সুন্দরবন। ভরা এই পর্যটক মৌসুমে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরাও। আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার ১৬ জন পর্যটক এসেছেন। এর আগে বছরের প্রথম দিনে আটটি দেশের ৩৮ জন ভিনদেশি পর্যটক সুন্দরবন ঘুরে গেছেন বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, সুন্দরবনে সারি সারি সুন্দরী, পশুর, কেওড়, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছ রয়েছে। দৃষ্টি যতদূর যায় সবখানেই যেন কোনো শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন। অপরূপ চিত্রল হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের চেঁচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন ও বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন। এসব বৈচিত্রময়তার কারণে বরাবরই বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের কদর আলাদা। গত দুই বছর করোনার কারণে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা তলানিতে নেমে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে সে চিত্র পাল্টে গেছে পুরোটাই।

্রিন্ট

আরও সংবদ