খুলনা | মঙ্গলবার | ০৭ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

ভিড়ে পদদলিত হয়ে আহত ২০

যশোরের মাহফিলে খোয়া গেছে ৫ শতাধিক মোবাইল-স্বর্ণালঙ্কার, থানায় মানুষের দীর্ঘ লাইন

নিজস্ব প্রতিবেক, যশোর |
০১:৫২ এ.এম | ০৫ জানুয়ারী ২০২৫


যশোরের পুলেরহাট এলাকায় আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাঠে আয়োজিত তিন দিনের তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে অন্তত পাঁচ শতাধিক লোকজন মোবাইল হারিয়েছেন। একইসঙ্গে কয়েকজন স্বর্ণালঙ্কার খুইয়েছেন। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে মাহফিল চলাকালে শহরের পুলেরহাট এলাকায় আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এখন থানায় দীর্ঘ লাইন ধরে জিডি করছেন ভুক্তভোগীরা। 
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে মাহফিলে অন্তত পাঁচ শতাধিক লোকজন মোবাইল হারিয়েছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এর মধ্যে শুধু শনিবার ১৩৫ জন জিডি করেছেন। এখনও ভুক্তভোগীরা যেভাবে জিডি করতে থানায় আসছেন, এতে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। রাতে বয়ান করেন বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসলি­দের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকে শীত উপেক্ষা করে মানুষজন জমায়েত হতে শুরু করেন। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাড়িয়ে সড়ক, মহাসড়কে নারী, শিশু ও পুরুষের ঢল নামে। মাহফিল প্রাঙ্গণে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল­াহ বয়ান করেন। রাতে আজহারী বয়ান করেন।
পুলিশ জানায়, মাহফিল শুরুর দিন সন্ধ্যা থেকে মোবাইল হারানোর ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় জিডি করতে আসতে থাকেন লোকজন। গত তিন দিনে পাঁচ শতাধিক মানুষ মোবাইল হারানোর বিষয়ে জিডি করেছেন।
কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই লোকজন জিডি করতে আসা শুরু করেন। তাৎক্ষণিকভাবে যারা মোবাইল কিংবা সিমের কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন তারা জিডি করেছেন। অনেকে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের ফেরত পাঠিয়েছি আমরা।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিন দিনের মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকের মোবাইল ফোন, স্বর্ণের গয়নাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারানো গেছে। অনেকে জিডি করেছেন। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
কতজন জিডি করেছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, শুধুমাত্র শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৩৫ জন জিডি করেছেন। গত তিন দিনে মোবাইল ও স্বর্ণের গয়না হারানোর জিডি করেছেন পাঁচ শতাধিক লোকজন। জিডি করতে আসা মানুষের ভিড় এখনও রয়েছে। যেভাবে লোকজন আসছেন, জিডির সংখ্যা আরও বাড়বে।  
শনিবার দুপুরে থানায় জিডি করতে আসেন যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকার ইব্রাহীম হোসেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে মাহফিলের মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শোনার সময় আমার মায়ের গলা থেকে দেড় ভরি ওজনের একটি সোনার গয়না চুরি হয়ে যায়। একই স্থান থেকে আমার স্ত্রীর গলার চেইন হারিয়ে যায়। দুটি ঘটনায় থানায় জিডি করতে এসেছি।
শহরের নওয়াপাড়া এলাকার মুর্শিদুল আজিম বলেন, শুক্রবার রাতে মাহফিল শেষে বের হওয়ার সময় আমার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন চুরি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য জিডি করেছি। মাহফিলে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। চোরেরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। আয়োজকদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
শহরের বেজপাড়া এলাকার এনামুল হক বলেন, কয়েক হাজার মানুষ মোবাইল হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে জিডি করেছেন। আবার অনেকে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি না করেই বাড়ি চলে গেছেন।
এরআগে মঞ্চে হাজির হন আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন। তিনি খুলনা বিভাগের মানুষের জন্য আগামি মার্চ পর্যন্ত ফ্রি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালুর ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে মঞ্চে আসেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে এ ধরণের আয়োজন করা সম্ভাব হয়নি। আমরা কল্পনা করিনি এমন আয়োজন করতে পারবো। ইসলাম ও কুরআন হাদিসের কথা এখন মানুষ নির্ভয়ে বলতে পারে।  
এদিকে, মাহফিলস্থলসহ পুরো যশোরে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ লক্ষ্য করা গেছে। মাহফিলে ১০ লাখের বেশী মুসলি­ সমবেত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। রাত দশটা পর্যন্ত চলে ড. মিজানুর রহমান আজহারির বক্তব্য।
এদিকে ওয়াজ মাহফিলে শুনতে এসে মানুষের ভিড়ে পদদলিত হয়ে প্রায় ২০ জন নারী পুরুষ আহত হয়েছে। মিলাদ মাহফিলের শেষ দিনে প্রচন্ড ভিড়ের কারণে পদদলিত হয়ে তারা আহত হয়।আহতদেরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
পদদলিত হয়ে আহতরা হচ্ছে, মইনুল ইসলাম (৩২), ওসমান গণী (১৮), জিয়ান (২১), মারজান (১৮), ইব্রাহীম (৪০), মাসুদ (২৬), সাইদুল (২৮), লাবলী (৩০) ও আফিফাসহ (১৪) প্রায় ২০ জন। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে পদদলিত হয়ে আহত হন। আহত অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জুবাইদা ইসলাম জানান, আহতরা সকলেই পদদলিত হয়ে কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মহিলা ও পুরুষ সার্জরি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সকলেই আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ