খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৯ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা, গাড়ি ব্যবহার করতেন স্ত্রী-সন্তান

খুকৃবির সাবেক ট্রেজারার সারোয়ারের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে নয় ছয়!

এন আই রকি |
০১:০৩ এ.এম | ০৮ জানুয়ারী ২০২৫


খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) ট্রেজারার অধ্যাপক সারোয়ার আকরাম আজিজ তিন বছর ধরে পিএইচডি ডিগ্রির ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিলেও কোন সনদপত্র জমা দেননি। এমনকি শিক্ষা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে তিনি যে সকল আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন সেগুলোর জরিমানাসহ ফেরত দেননি। আইন অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন না হলে আর্থিক সুবিধার সমপরিমাণ অর্থ শতকরা ১৫ ভাগ সরল সুদে ফেরত দেওয়ার আইন থাকলেও তিনি সেটা আমলে নেননি। আলোচিত এই ট্রেজারার খুকৃবিতে ২০২১ সালের ২৯ জুলাই মাসে প্রথম ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করেন। ট্রেজারের হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বেপোরোয়া হয়ে উঠেন। জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মের সাথে। 
অভিযোগ রয়েছে, তিনি খুকৃবিতে যোগদান করার পরই তৎকালীন আ’লীগ সরকারের সংসদ সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। যার ফলশ্র“তিতে খুলনা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতির পদটি বাগিয়ে নেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথম শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজনকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। তার স্ত্রী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরির জন্য এবং সন্তানকে খুলনার একটি সরকারি স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য বেহিসাবে ব্যবহার করা হতো ট্রেজারের ব্যক্তিগত গাড়ি। 
খুকৃবির তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান খান এবং রেজিস্ট্রার ড. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ারের সাথে ট্রেজারের নানান কারণে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান খান বিদায় নেওয়ার পর ট্রেজারার নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রার্থী হতে জোর তদবির শুরু করেন। তিন মাস তিনি নিয়মিত দায়িত্বও পালন করেন। উপাচার্য হওয়ার জন্য ট্রেজারার সারোয়ার আকরাম আজিজ খুলনা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন সংসদ সদস্যের দিয়ে তদবিরসহ ডিও লেটারে সুপারিশও করিয়ে ছিলেন। কিন্তু এরপর নানা কারণে তিনি উপাচার্য হতে পারেনি। 
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম দায়িত্ব নেওয়ার পরও তার সাথে ট্রেজারের নানান কারণে বিভেদের সৃষ্টি হয়। যার কারণে উপাচার্য হিসেবে তিনি ১ বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের আবাসন ও অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তিনি সাবেক উপাচার্যের ভাউচারেও আপত্তিকর নোট দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। এছাড়া ট্রেজারার দায়িত্ব পালন সময়কালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহকে নিয়োগকৃত কমর্কতা ও কর্মচারীদের প্রফিডেন্ড ফান্ডে টাকা কেটেছেন। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনই হয়না। 
এছাড়া গবেষণা সেল গঠন ব্যতীত গবেষণার অর্থ ব্যয়, বেশিরভাগ খরচ অগ্রিম নিয়ে নগদ ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যয় করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা অফিস ভবনে বসবাস করা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত অসমন্বিত অগ্রিমের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকা, অতিরিক্ত হারে দায়িত্ব ভাতা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে কোন আয়ের হিসাব না রাখাসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আপত্তি জানিয়েছিলেন।
আরও জানা যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স অনুষদের জেনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ২০১০ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশু পালন অনুষদের পশু প্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ  ওমর ফারুকের তত্ত¡াবধায়নে পিএইচডি কোর্স করার জন্য ১ আগস্ট ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই তিন বছরের ছুটি নেন। পরবর্তীতে সময় ক্ষেপন করে গবেষণা তত্ত¡াবধায়কের প্রত্যায়নসহ ২০১৪ সালের ২১ জুলাই কর্মস্থলে যোগদান করেন। 
আ’লীগের শেখ পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে তার সুসম্পর্ক ছিল। শ্বশুর বাড়ির দিক থেকেও তিনি আ’লীগের ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি খুব অল্প সময়েই সুনজরে পড়েন। যার ফলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রির সনদপত্র জমা না দিয়ে এবং জরিমানার টাকা পরিশোধ না করেই দেদারছে তিনি ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর সারাদেশের ন্যয় খুকৃবিতে যখন ছাত্ররা আন্দোলন করেন তখনও কৌশলী ট্রেজারার শিক্ষার্থীদের ম্যানেজ করে চলছিলেন। 
সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পরিষদের এই নেতাকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাশেম খুকৃবির ট্রেজারার পদ থেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগেই অব্যাহতি প্রদান করেন। পাশাপাশি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার ল্যাবরেটরি এ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খানকে খুকৃবির দ্বিতীয় ট্রেজারার হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন। 
খুকৃবির সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক সারোয়ার আকরাম আজিজ মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, পিএইচডি ডিগ্রি আমি শেষ করতে পারিনি। যদি কোন আর্থিক জরিমানা ফেরত দিতে হয় সেটা আমি পেনশনের সময় দিব। এছাড়া তার স্ত্রী ও সন্তানের স্কুলের দূরত্ব খুবই কম তাই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা হতো। এডহকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পিএফ কাটার নিয়ম কোথাও নেই। তবে খুকৃবির একটি নীতিমালায় এদেরকে ভবিষ্যতে স্থায়ী করার হবে বলে দেখানো হয়েছিল। তাই পিএফ কাটা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমি এখনও খুকৃবি থেকে বেরিয়ে সিকৃবিতে যাচ্ছি সেখানে যোগদান করবো।

্রিন্ট

আরও সংবদ