খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

রাজকীয় সম্মান

আমিরুল ইসলাম কাগজী |
০১:৩০ এ.এম | ০৯ জানুয়ারী ২০২৫


সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। স্বতঃস্ফূর্ত এ সংবর্ধনা তিনি জীবদ্দশায় যে ফিরে পাবেন এমন আশা তো কেউ করে নাই। ফ্যাসিবাদী শাসকের রোষানালে তার দিন কেটেছে প্রাণঘাতী অসুস্থতা নিয়ে। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। মহান রাব্বুল আলামিন তাকে সুস্থ করে আবার দেশের জনগণের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন-এটাই ছিল লাখ লাখ নেতা-কর্মীর দোয়া কামনা। দুর্বৃত্ত দুঃশাসক খুনি হাসিনা একটি সাজানো দুর্নীতি মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথমে পাঁচ বছর এবং উচ্চ আদালতে ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে খুব তাড়াহুড়ো করে নিম্ন আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল তিনি যেন ওই বছরের ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। জলজ্যান্ত একটা মিথ্যা মামলা-তাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে পাঠানো হলো। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ টাকার তহবিল তসরুফের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক তথ্য হলো; ২ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি কানা কড়িও তসরুপ করা হয়নি বরং সেই টাকা ফুলে ফেঁপে এখন ১০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বিষয়টি ছিল একেবারেই পদ্ধতিগত ভুলের কারণে সৃষ্ট। নিম্ন আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে বিচারক এনায়েতুর রহিম সাজা আরও দু’বছর বাড়িয়ে সাত বছর করলেন। সহজেই অনুমান করা যায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা কিভাবে আদালতকে কান ধরে উঠবস করাতেন। এটা নিয়ে তিনি সকাল-বিকাল যখন যেখানে পেরেছেন বক্তৃতা বিবৃতিতে বলেছেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে খুবই বোকা ভাবতেন। তিনি মনে করতেন তিনি যা বলবেন এটাই জনগণ বিশ্বাস করবে। আর সেজন্যই তিনি প্রতিনিয়ত একটি কথাই বারবার বলতেন। এটা ছিল তার বয়ান তৈরীর কৌশল।
দুই. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে এবং সেগুলো বিচারাধীন। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে বিশ্বময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তার পরিবারের অর্থ কেলেঙ্কারি এবং লুটপাটের কাহিনী। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা মিলে গত ১৬ বছরে কমপক্ষে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। কেবলমাত্র রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চার বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নিয়েছেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি আবার লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী। এখনো নীতি-নৈতিকতার মানদন্ডে যুক্তরাজ্যের অবস্থান অতুলনীয়। যে কারণে সরকার দলের মন্ত্রী হওয়া সত্তে¡ও টিউলিপ সিদ্দিককে ছাড় দেয়া হচ্ছে না দুর্নীতির বিচারে। বিভিন্ন সময় লন্ডনে তিনি যে বাড়িগুলো কিনেছেন সে অর্থের উৎস জানার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের চীন সফরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখান থেকে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আর বৃটেন ত্যাগ করতে পারবেন না। ছোটখাটো দুর্নীতি নয় মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতি। এমন অপমান অপদস্ত হওয়ার দৃশ্য শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয় গোটা বিশ্ব অবলোকন করছে। এটাই শেখ হাসিনার এবং শেখ মুজিবের পরিবারের অর্থকড়ি লুটপাটের চিত্র। যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একজন জননন্দিত জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে অপমান অপদস্ত করার জন্য প্রাণ আনন্দ চেষ্টা চালিয়েছেন আজ গোটা বিশ্ব দেখবে তারই ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক কিভাবে অপমান অপদস্ত হচ্ছেন প্রকৃত দুর্নীতি অনিয়ম করার দায়ে।
তিন. রাজকীয় এয়ার এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সম্পূর্ণ মুক্ত পরিবেশে রাজকীয় সম্মানে চিকিৎসা নিতে এক দিক দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জননন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া । ঠিক একই সময় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য যুক্তরাজ্য সরকারের দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন জবাবদিহি করার জন্য। একদিকে শেখ মুজিবের পরিবারের প্রতি মানুষের ঘৃণা, বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা অন্যদিকে জিয়া পরিবারের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং সম্মান।
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি’র শত শত নেতা-কর্মী গুম খুন এবং বিচারক বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাতের পর রাত ঘর ছাড়া থেকেছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর ধরে প্রবাসী জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। অসংখ্য নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নীরবে নিভৃতে এ সমস্ত অত্যাচার অবলোকন করে গেছেন। নেতা-কর্মীদের পক্ষে কোন বক্তব্য বিবৃতি দিতে পারেননি তিনি। আজ তিনি মুক্ত স্বাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন। তাকে বহন করার জন্য দোহার থেকে এসেছে রাজকীয় এ্যাম্বুলেন্স। এই যে সম্মান এই যে মর্যাদা তিনি ফিরে পেলেন সবই মহান আল্লাহর অপার মহিমা।
চার. শেষ করব সূরা আল ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াত দিয়ে- আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। আপনারই হাতে আছে কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। (সুরাঃ আল এমরান, আয়াত-২৬)। 
লেখক : সাংবাদিক নেতা, কলামিষ্ট।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ১ মাস আগে