খুলনা | শুক্রবার | ১০ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৭ পৌষ ১৪৩১

বাগেরহাটে বিএনপির দু’পক্ষের বিরোধে নৃশংসতা

অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িগুলোতে এখনও আতঙ্ক, খাবার দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট |
০১:৪৭ এ.এম | ১০ জানুয়ারী ২০২৫


“তারা শত শত মানুষ এসে বৃষ্টির মত ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। আমাদের সবকিছু ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধা মা ছোট ছোট নাতি-পুতিদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। ঘরের মধ্যে রেখেই আগুন দিয়ে দিছে। বাড়ির মহিলা বাচ্চা সবাইরে মারছে ও রক্তাক্ত করছে। সেনাবাহিনী, প্রশাসনের সামনেই আমাদের ঘরে আগুন দিয়ে দিছে”। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার কুলিয়াদাইড় গ্রামে বিএনপি নেতা রুহুল আমিনের পোড়া বাড়িতে তার বোন ফরিদা ইয়াসমিন এভাবেই বুধবার সন্ধ্যার নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
তার দাবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে আকুতি-মিনতি করলেও তারা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে আসেনি। আগুন দেওয়ার আগে তারা এলাকায় পৌঁছালেও বাড়ি-ঘর বাঁচাতে সাহায্য করেনি।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন আমার ৮ ভাইয়ের বসত ঘরের সব পুড়ে গেছে। পড়ার মত কাপড়ও নেই আমাদের। এক কাপড়ে রয়েছি গতকাল থেকে। রান্নারও কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার শিশু বাচ্চাসহ আমরা খেয়েছি। পুরুষরা বাড়িতে নেই। বৃদ্ধ মা ও শিশুদের নিয়ে খুবই ভয়ে রয়েছি। হাসপাতালে যাওয়ারও সাহস হচ্ছে না আমাদের। 
রুহুল আমিনের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হতে চায়। এই কারণেই তার প্রতিপক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে শত শত লোক বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এদিকে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা। পরে পুলিশ সুপার মোঃ তৌহিদুল আরিফও ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি নেতা শামীম বলেন, যারা এর সাথে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনকে বলবো এরা কোন দলের না, এরা সন্ত্রাসী এদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন তিনি।
ওই গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার দূরে প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি। দুই বাড়ির মাঝে ওই গ্রামের ভিআইপি মোড়। সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষ জনের চালাচল কম, একটা থমথমে পরিবেশ, সবার মধ্যে একটি চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। 
মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, রুহুল মেম্বররা একাধিকবার আমাদের উপর হামলা ও মারধর করেছে। গতকালও প্রথমে আমাদের ভাইপো মামুন মোল­া ও মাহমুদ মোল­াকে মারধর করে, তাদেরকে নিয়ে আমার স্বামী হাসপাতালে ছিল। বিকেলে খবর আসে আমাদের বাড়িতে রুহুল মেম্বরের লোকজন হামলা করতে আসতেছে, তখন বংশের লোকজন এগিয়ে যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে তা আমরা জানি না। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোঃ তৌহিদুল আরিফ বলেন, আগে থেকেই সেখানে বিএনপি’র দুই পক্ষের উত্তেজনা ছিল। মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ সেনাবাহিনী সেখানে যায়। আমাদের উপস্থিতির জন্য বড় অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেখানে পুলিশ আগুন নেভানোর কাজেও অংশ নেয়। অপরাধীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে রুহুল মেম্বরের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা যায়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। স¤প্রতি ইউনিয়ন বিএনপি’র কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সব শেষ সোমবার রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়। এর জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকেলে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় রুহুল মেম্বর ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ওই ঘটনা ঘটে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ৮টি বসত ঘর।

্রিন্ট

আরও সংবদ