খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

খুলনার সাবেক কাউন্সিলর খুন

অপসারিত আরেক কাউন্সিলরসহ কক্সবাজারে যান গোলাম রব্বানী, হত্যাকাণ্ড ‘পরিকল্পিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৪ এ.এম | ১১ জানুয়ারী ২০২৫


কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর গোলাম রব্বানীকে মাথায় গুলি করে হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এ ঘটনায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সদ্য অপসারিত আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার এবং কক্সবাজারের স্থানীয় এক বাসিন্দাকে আটক করা হয়েছে। শেখ হাসান ইফতেখার ও গোলাম রব্বানী একই সময়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে উঠেছিলেন।
আটক শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু খুলনার ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আটক অপরজন মেজবাহ হক ভুট্টো। তিনি কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় গোলাম রব্বানীকে। তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরের সঙ্গে তাঁকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদেও ছিলেন রব্বানী। তাঁর বাড়ি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দৌলতপুরে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক শেখ হাসান ইফতেখার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে রব্বানী ও ইফতেখার একসঙ্গে কক্সবাজারে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে একসঙ্গে হোটেলে ওঠেন দু’জন। হত্যার ঘটনায় আটক অপরজনের নাম মেজবাউল হক ওরফে ভুট্টু। তিনি কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে নিহত গোলাম রব্বানীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতেই দু’জনকে আটক করা হয়।
জানতে চাইলে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতে গোলাম রব্বানীকে পরিকল্পিতভাবে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ১২টার পর কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে ইফতেখারকে আটক করা হয়।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাব জানায়, ইফতেখারসহ নিহত গোলাম রব্বানী টিপু বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারে আসেন। হোটেল গোল্ডেন হিলের অতিথি লিপিবদ্ধ বই এ দেখা গেছে আটক ইফতেখার ও নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সঙ্গে রুমি (২৭) নামের এক নারীও সকাল ৭টায় হোটেলে উঠেন। রুমি নামের ওই নারী পলাতক বলে জানান র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, হোটেলের রেজিস্ট্রার ঘেঁটে দেখা গেছে, এক নারীও গোলাম রব্বানীর কক্ষে ছিলেন। তবে ঘটনার পর থেকে তিনি লাপাত্তা। তাঁর সন্ধান পেলে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা সহজ হবে।
হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীর সঙ্গে গোলাম রব্বানী হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সমুদ্র সৈকতের সিগাল হোটেলের সামনের কাঠের সেতুতে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন গোলাম রব্বানী। হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে কাঠের সেতুর দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।
নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা অটোরিকশাচালক আব্দুস সালাম বাবু জানান, সিগাল পয়েন্টের সামনে কাঠের ব্রিজের পাশে একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু কে মেরেছে দেখতে পায়নি। তখন চোখে পড়ে এক ব্যক্তি ঢলে পড়ছে। এরপর গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে নিজের অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বলে জানান আব্দুস সালাম। হাসপাতালে আনার পর পকেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ জানায়, হত্যার ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত গোলাম রব্বানীর ভগ্নিপতি মোঃ ইউনুস আলী সেখ। তিনি খুলনার রূপসার উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দ নগরের বাসিন্দা। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে গোলাম রব্বানীর চিংড়ির ঘের ছিল। গত বুধবার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসে করে গোলাম রব্বানী কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় খুলনার দৌলতপুর থানার পুলিশের মাধ্যমে মামলার বাদী জানতে পারেন সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গোলাম রব্বানীকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে গেছেন। মামলার বাদী এবং তাঁর স্ত্রী হাসপাতালের মর্গে নিহত গোলাম রব্বানীর পরিচয় শনাক্ত করেন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী মোঃ ইউনুস আলী সেখ বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপি’র কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে রব্বানীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারের সঙ্গে রব্বানীর কোনো বিরোধ ছিল কি না, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তাঁদের সঙ্গে থাকা নারীর বিষয়েও তিনি জানেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করবে, সেটিই তাঁদের প্রত্যাশা। নিহত রব্বানীর সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
গোলাম রব্বানীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইলিয়াস খানও। তিনি বলেন, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। তবে শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে গোলাম রব্বানীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ