খুলনা | বুধবার | ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৩ মাঘ ১৪৩১

নানা বাড়ি যাওয়া হলো না শিশু মরিয়মের

মোংলায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে তিন বছরের শিশু নিহত

মোংলা প্রতিনিধি |
০১:৫৫ এ.এম | ১৩ জানুয়ারী ২০২৫


ট্রেন আসতে দেখেই গাড়ি থেকে দু’হাতে দুই সন্তান নিয়ে তাড়াহুড়া করে দ্রুত নামতে গিয়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে মরিয়ম নামে তিন বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। রবিবার দুপুরে খুলনা- মোংলা রেলপথের দ্বিগরাজ পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দায়িত্বরত লাইনম্যান রেলগেট না ফেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। আর রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে গেটম্যান শাহিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর পরই গেটম্যান পলাতক রয়েছে, তাকে খুঁজছে পুলিশ। 
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুই সন্তানকে নিয়ে মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে যাত্রীবাহী বাস যোগে বাগেরহাটের খানপুর বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন মা ফাতেমা বেগম। পথিমধ্যে দিগরাজ রেলক্রসিংয়ের মাঝ বরাবর বাসটি পৌঁছালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মোংলা কমিউটার ট্রেনটি দ্রুত গতিতে রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় সামনে দিয়ে যেতে না পেরে চালকের কথা অনুযায়ী যাত্রীবাহী বাস থেকে দু’হাতে দুই সন্তানকে নিয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে তার কোল থেকে শিশু মরিয়ম ছিটকে চলন্ত ট্রেনের নিচে যায়। ট্রেনের রেলিংয়ে বেঁধে ক্ষত-বিক্ষত হয় মরিয়ম। ঘটনাস্থলেই শিশুটির নিহত হলেও অন্য সন্তানকে স্থানীয়রা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ট্রেনটি চলে গেলে শিশুটিকে উদ্ধার করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ শামিম হাসান মৃত ঘোষণা করে। তবে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই শিশু মরিয়ম মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ডাঃ শামিম। নিহত শিশু মরিয়ম মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকার রোকন শেখের মেয়ে। 
এদিকে অবহেলার কারণে দ্বিগরাজের রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বে থাকা গেটম্যান মোঃ শাহিনকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় স্কুলের কোমল মতি শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ গ্রহণ করে। এতে মোংলা-খুলনা মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। পরে পুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে এই সড়কে আবার যান চলাচল শুরু হয়। দুর্ঘটনার পর পরই দিগরাজ রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান পলাতক রয়েছে। তার বাড়ি নাটোর জেলায় বলে জানা গেছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
মোংলা ট্রেন স্টেশনের টিকিট মাস্টার মোঃ শরিফুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে গেটম্যান পলাতক রয়েছে, তবে আমরা খবর পাওয়া মাত্রই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, রেল কর্তৃপক্ষ গেটম্যান শাহিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এছাড়া নিহত শিশু মরিয়মকে রেল কর্তৃপক্ষের আইনানুযায়ী তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। গেটম্যান শাহিনের বিরুদ্ধে মামলাসহ গ্রেফতারের চেষ্টা করছে রেল পুলিশ। 
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময় মোংলা-খুলনা ট্রেন চলাচল শুরু হয়। মোংলা শহরের মধ্যে দ্বিগরাজে একটি মাত্র গেট। দায়িত্ব অবহেলার কারণে গেটম্যান মোঃ শাহিনের বিরুদ্ধে রেল পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং এ ঘটনায় মামলার গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলেই আমরা তাকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে।
গত বছর ২০২৪ সালে ১ জুন মোংলা-খুলনা ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গেটম্যানের অবহেলার কারণেই এই প্রথম এক শিশুর প্রাণ ঝরলো মোংলা-খুলনা এই রেল লাইনে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ