খুলনা | বুধবার | ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৩ মাঘ ১৪৩১

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে খালাস পেলেন বাবর, মুক্তিতে বাধা নেই

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৪২ পি.এম | ১৪ জানুয়ারী ২০২৫


একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পর আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আইনের মামলাতেও যাবজ্জীবন সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এছাড়া মহসিন তালুকদার, এনামুল হক, রাজ্জাকুল হাইদারকেও খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে বাবরের মুক্তিতে বাধা নেই।

খালাস পাওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন- রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, নুরুল আমিন, মহসীন তালুকদার ও এনামুল হক। এ ছাড়া যাবজ্জীবনের পরিবর্তে উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে ১৪ বছর এবং ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে আকবর হোসেন, লিয়াকত হোসেন, হাফিজুর রহমান ও শাহাবুদ্দিনকে।

আর মৃত্যুজনিত কারণে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, দীন মোহাম্মদ, আব্দুর রহিম ও হাজী আব্দুস সোবহানের আপিল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বুধবার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে বাবরের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির খালাস চেয়ে এ আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। অন্য পাঁচজন আসামির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে নিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে জবানবন্দি দিতে। এই জবানবন্দি দিলে তাকে (বাবরকে) আসামি না করে সাক্ষী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৭৮ দিন রিমান্ডে থাকার পরও তিনি এই জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। যে কারণে তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়।’

শিশির মনির বলেন, ‘আদালত আজকেই একটি অ্যাডভান্স আদেশ দেবেন। আশা করছি আজকেই এই আদেশ বাস্তবায়ন হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। আদেশ যথাসময়ে পৌঁছার পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।’

যাবজ্জীবন থেকে কমিয়ে যে চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। ফলে এই চারজনেরও কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির।

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর একই ঘটনায় হওয়া অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় বাবরসহ ৭ আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়।

এর আগে গত ৬ নভেম্বর এ মামলার শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় নথি উপস্থাপনের পর যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। উভয়ের যুক্তি-তর্ক শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুটি মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ফাঁসির দণ্ড কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত।

এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।

এছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানাও প্রদান করা হয়।

মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য ১১ জন হলো- এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমাণ্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিন, চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান, অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ