খুলনা | বুধবার | ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

খবর প্রতিবেদন |
১০:৫৪ পি.এম | ১৪ জানুয়ারী ২০২৫


সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের ইকোনমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ নিজেই এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত পদে টিকতে পারলেন না যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মিনিস্টার ও লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক।  ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ মাথায় পদত্যাগ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহারসহ নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন তিনি।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার তার পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
গত আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকার আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসে। ওই অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এ তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর  বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর ওই ছবি এ সময় ফলাও করে প্রচার করে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান বেশ কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর, সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতে থাকে।
এর মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইনডিপেনডেন্ট এ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেছিলেন। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন। ওই তদন্ত চলার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ সিদ্দিক গত বছর লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর গত জুলাইয়ে তাঁকে ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি এ্যান্ড সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেয় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকার।
টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে লন্ডনে বিনামূল্যে (উপহার) দু’টি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স¤প্রতি।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহŸান জানান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনক। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদটি ছেড়ে দিতে আহŸান জানায় দুর্নীতি বিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিশনে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনও রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছিলেন টিউলিপ। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে পরিচিত গণভবনে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারপত্রসহ টিউলিপের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেক বস্তু মেলে। এসবের মধ্যে রয়েছে লেবার পার্টির পোস্টার, বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার দেওয়া পোশাক-গহনা, দামী কলমের মোড়কসহ রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু জিনিস।
গত বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ