খুলনা | বুধবার | ২২ জানুয়ারী ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসুক

|
১২:০৬ এ.এম | ১৮ জানুয়ারী ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষে যে ১১টি কমিশন গঠন করেছিল, এর মধ্যে ৪টি কমিশনের সুপারিশ গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কমিশনের প্রধানেরা। এগুলো হলো সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার ও পুলিশ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে জনগণের দৃষ্টি ছিল সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতি।
দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী ও একনায়কত্ববাদী শাসনের কারণে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের কিনারে এসে পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রকে স্বৈরতান্ত্রিক ধারা থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিতে সংস্কারের বিকল্প নেই।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে যেসব প্রস্তাব করেছে, এর মধ্যে আছে এক ব্যক্তির দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত না হওয়া, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করা, প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে ২১-এ নামিয়ে আনা, সংসদের নিম্নকক্ষে ১০ শতাংশ তরুণকে প্রার্থী করা, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা এবং অর্থবিল ছাড়া কোনো ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ব্যবহার না করা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে পলাতক আসামি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা থেকে বিরত রাখা, ৪০ শতাংশের কম ভোট পেলে পুনরায় ভোটের ব্যবস্থা করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে কালোটাকা সাদা করার রাষ্ট্রীয় চর্চা বন্ধ ও নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশন ফৌজদারি অপরাধ তদন্তে বিশেষায়িত তদন্ত দল, থানায় কাঁচের ঘরে জিজ্ঞাসাবাদ ও যথেচ্ছা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে।
এসব কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কোনো কোনো কমিশন জনমত জরিপের মাধ্যমেও মতামত নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা না করলেও দলগুলোর কাছে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল এবং অনেক দল তা দিয়েছে। কমিশনগুলো যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক বা দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু কমিশনগুলোর প্রধান ও এর সদস্যরা পরিশ্রম করে অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা তাঁদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সংস্কার প্রতিবেদনগুলোকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এগুলো হবে নতুন বাংলাদেশের সনদ’।
প্রশ্ন হলো, সেই সনদগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? এ জন্য যে সব রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্য মানে সব বিষয়ে সব দল একমত হবে, তা নয়। তবে নির্বাচন, সংবিধান ইত্যাদি বিষয়ে তাদের ঐকমত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনও গঠন করেছে। মঙ্গলবার তিনজন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলন করে ফেব্র“য়ারিতে এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছেন।
ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আলোচনা যতটা সম্ভব আরও এগিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বা সুপারিশ, যার সঙ্গে জাতির ভবিষ্যৎ জড়িত, সেগুলো নিয়ে সংলাপ যেন অর্থবহ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সব দল ও স¤প্রদায় যাতে খোলামনে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, সরকারের পক্ষ থেকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা ঐক্যের বদলে বিভেদের বিস্তারই বেশি দেখি। আমরা যদি সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, তাহলে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ