খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১

শিক্ষার মান নিশ্চিত করুন

|
১২:০৬ এ.এম | ২৩ জানুয়ারী ২০২৫


দেশের শিক্ষার মান, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার মান তলানিতে নেমেছে। একসময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে, এখন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং বা মানবিচারে বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও তার নাম নেই। একই অবস্থা চিকিৎসাশিক্ষার ক্ষেত্রেও। একসময় প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়তে আসতেন, এখন সেই সংখ্যা অতি নগণ্য। অথচ দেশে প্রায় প্রতিবছরই বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করে না। শিক্ষার গুণগত মান ও কাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরিতেও ব্যর্থ এসব প্রতিষ্ঠান। আবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে, যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। সনদের বাণিজ্যই অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রধান কাজ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন অভিযোগও করা যায় যে মানসম্পন্ন শিক্ষা তারা ইচ্ছে করেই নিশ্চিত করেনি।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ বিদেশে উন্নতমানের জীবনযাত্রা, আধুনিক পড়াশোনা এবং শিক্ষার পাশাপাশি চাকুরির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষাবিদরা বলছেন, মানের দিক দিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের স্কলারশিপ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করছে। ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছে ৫৫টি দেশে।
২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮। আর ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছিল ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে; যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করেন এসংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০২৪ সালের ‘ওপেন ডোর্স রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এতে বাংলাদেশ এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো দেশের তালিকায় ১৩তম থেকে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে মেধাবী ও উদ্যোগী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণে আগ্রহ বেড়ে চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর দেশে ফেরত না আসা অথবা দেশে তাঁদের জন্য ভালো কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারা ভবিষ্যেক হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে মেধার ঘাটতি বড় সংকট সৃষ্টি করবে। আমাদের উচ্চশিক্ষার দুর্গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ থেকে উচ্চশিক্ষাকে রক্ষা করতে হবে। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ