খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১

ভুয়া মামলায় হয়রানি : বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না

|
১২:০৭ এ.এম | ২৬ জানুয়ারী ২০২৫


আওয়ামী লীগ আমলে ‘গায়েবি’ মামলার ছড়াছড়ি ছিল। যে ঘটনা ঘটেনি, সেটা উলে­খ করে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গয়রহ মামলা করতেন। এসব মামলায় আসামির তালিকায় বাদ যেতো না মৃত ব্যক্তিও। আসামি খুঁজতে মৃত ব্যক্তির কবর পর্যন্ত চলে গেছে পুলিশ, এমন ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও ভুয়া মামলা দেওয়ার সেই সংস্কৃতি এখনো চালু আছে। কোথাও হত্যা বা নাশকতার ঘটনায় মামলা করে পুলিশ গয়রহ আসামি করেছে নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্ররোচনা আছে বলে অভিযোগ আছে।
এসব মামলা নিয়ে খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও মামলাবাজদের নিবৃত্ত করা যায়নি।  এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী ফেব্র“য়ারির মধ্যে সব ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহারে কাজ করছে সরকার। তবে ঠিক কতগুলো গায়েবি মামলা এখন চলমান, তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব জানাতে পারেননি তিনি।
আইন উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে করা উদ্দেশ্যমূলক ও ভুয়া মামলাগুলোও প্রত্যাহারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মোকাবিলায় তৎকালীন সরকার যেসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তার প্রতিটির বিচার হোক, সেটা সবারই দাবি। কিন্তু এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক ভুয়া ও উদ্দেশ্যমূলক মামলাও হয়েছে, যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও স্বীকার করেছেন। ৯ ডিসেম্বর খুলনায় আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুয়া মামলা হচ্ছে। সব ভুয়া মামলাকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো দোষীকেও ছাড় দেওয়া হবে না এবং নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিত, এতে ১০ জনের নাম থাকতো; আর ২০০-৩০০ জন বেনামি। এখন পুলিশের থেকে চলে গেছে সিভিলে। এখন মামলায় ১০ জনের নাম থাকে আর বাকি ২০০-৩০০ জন বেনামি।’
এসব মামলার আসামির তালিকায় অনেক নাম যুক্ত করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে অক্টোবর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সা¤প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেলিংসহ নানা রকম হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ নানা ধরনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। 
প্রশ্ন হলো, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় যাকে ভুয়া মামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো সম্পর্কে সরকার কী আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা জানার অধিকার দেশবাসীর আছে। আইন উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা গায়েবি মামলা বাতিল করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন। একই সঙ্গে এই সরকারের আমলে দায়ের করা ভুয়া ও ঢালাও মামলাও প্রত্যাহার করা জরুরি বলে মনে করি। ভুয়া ও ঢালাও মামলার কারণে নিরীহ মানুষই কেবল হয়রানির শিকার হচ্ছেন না, বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

্রিন্ট

আরও সংবদ