খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৭ মাঘ ১৪৩১

ন্যূনতম সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দফায় বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন ঐক্যমত

খবর প্রতিবেদন |
০১:০২ এ.এম | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫


ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দফায় একমত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।  
সোমবার দুপুরে ইসলামী আন্দোলনের আমির মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের (চরমোনাই পীর) সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঐক্যমতে পৌঁছান।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সোমবার ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করিমের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা  হয়েছে। আমরা মোটামুটি ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় ১০ দফার যে বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলো হচ্ছে আধিপত্যবাদ, স¤প্রসারণবাদ ও সামাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচার, ভোটাধিকারসহ সকল মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যমত গড়া, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্র্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ও সকল অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইন-শৃঙ্খলার স্বাভাবিককরণ।  পাশাপাশি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা, আগামীতে আ’লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই ব্যাপারে রাজনৈতিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং প্রশাসনে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
এমন কি ইসলামী শরিয়াহ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলাম বিরোধী কোনো কথা কেউ বলবে না এই ব্যাপারে দুই দলই ঐক্যমত পোষণ করেছে।
বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশ, মানবতা এবং রাজনীতির ব্যাপারে যে কথাগুলো আমাদের সঙ্গে হয়েছে; তা বিএনপি’র মহাসচিব গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। আমাদেরও ওই একই কথা।’
দ্রুততম সময়ের নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে আমির বলেন, ‘এটা আমরা আগে থেকেই বলে আসছি- খুব বেশি সময় না নিয়ে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই। আর ৬ মাস তো প্রায় চলেই গেলো, এক বছরের মধ্যেই সুন্দর একটা জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে এটাই মূলত আমাদের কথা।’
আমির আরও বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আমাদের দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলবে।’
এর আগে দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল­াহ বুলু। বৈঠক শেষে তারা সেখানে চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সাথে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল­াহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের আমির, মহাসচিবসহ ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ জোট ছেড়ে যায় তারা। ২২ জানুয়ারির বৈঠকটি ছিল  দুই দলের মধ্যে প্রায় তিন বছর পর।
এই বৈঠকের পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবেই সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইসলামি আন্দোলনের আামির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সাথে বৈঠক করেছেন।
সিদ্ধান্ত গুলো হলো : ১. আধিপত্য-বাদ, স¤প্রসারণ-বাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। ২. দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ৩. ভোটাধিকারসহ সকল মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। ৪. ন্যূনতম প্র্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সম্রয়ের মধ্যে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। ৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং সকল অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে ন্রিয়ে আসা। ৬. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তি দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। ৭. ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলো একে-অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা বলব না। ৮. আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। ৯. ইসলামী শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেব না এবং ইসলাম বিরোধী কোনো কথা কেউ বলবো না। ১০. প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।

্রিন্ট

আরও সংবদ