খুলনা | শুক্রবার | ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৭ মাঘ ১৪৩১

সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করতে হবে পাঁচ বছর

দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য মিজানের ৮ বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০১ পি.এম | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫


২০১৯ সালে করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যকে পৃথক দুই ধারায় সাজা দেন আদালত। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মুহাম্মদ আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন। দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রায় ঘোষণার আগে মিজানুর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
দণ্ডাদেশের আগে তিন ঘণ্টায় দেড় লিটার পানি পান করেন সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। এ সময় তিনি কফি ও বরই খেয়েছেন। গতকাল কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে আদালতের ভেতরের বেঞ্চে বসতে দেয়া হয়। তখন তিনি আইনজীবীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি কফি ও হাফ লিটার পানি পান করেন। 
দুপুর ১১টা ৩২ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠেন। তখন পুলিশ তাকে কাঠগড়ায় উঠতে বলেন। তার উত্তরে তিনি বলেন, আগে মামলা ডাকুক; তারপর কাঠগড়ায় উঠবো। এরপর তিনি সেখানে বসেই থাকেন। এরপর শুরু হয় আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। তখন রায়ের অপেক্ষায় বসে থেকে তিনি আরো দুই লিটার বোতলের পানি পান করা শুরু করেন। সেই বোতলের অর্ধেক পানি তিনি পান করেন। এ সময় তাকে বরই খেতে দেয়া হয়। অন্যান্য মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে তাকে বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে কাঠগড়ায় তোলা হয়। পরে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 
আসামিপক্ষের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন খান জানান, রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো তিন মাস কারাদণ্ড এবং একই আইনের ২৭(১) ধারায় পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
তিনি আরও জানান, তবে উভয় ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে এজন্য তার পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত এক কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৯৮৯ টাকা রাষ্ট্রের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন খান বলেন, এ রায়ে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো, আশা করি সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাবো। আসামির দাবি, শেখ পরিবারের রোষানলে তাকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে মাইনাস করতেই এ মামলা করা হয়েছে। তিনি একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এক কোটি ৫৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মোটেও সত্য নয়।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির পরিচালক মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তিনি।
অভিযোগপত্রে আসামির বিরুদ্ধে এক কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ২০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি দুদক ও আসামী পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন। এ সময়ে মিজানুর রহমান জামিনে ছিলেন। তবে ২৩ জানুয়ারি আদালত জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ