খুলনা | শুক্রবার | ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৮ মাঘ ১৪৩১

উদ্বেগ উৎকন্ঠায় পরিবারের সদস্যরা

অপহরণের চার দিনেও উদ্ধার হয়নি সাতক্ষীরার ১১ জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:৪০ এ.এম | ৩১ জানুয়ারী ২০২৫


সুন্দরবনের দুবলার চরের বাহির সাগর এলাকা থেকে গত ২৭ জানুয়ারি ভোরে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরে। এদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। বাকি চারজনের মধ্যে একজনের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় এবং অন্য তিনজনের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল ও মোংলা থানায়। 
এদিকে অপহরণের চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত জেলেদের উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে অপহৃতের পরিবারের সদস্যরা। অপহৃত জেলের দ্রুত উদ্ধার করার দাবি জানান ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা।
অপহৃত জেলেরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের মোঃ দাউদ আলী সানার ছেলে অজাহারুল ইসলাম, চাকলা গ্রামের মোঃ মহিজুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের মোঃ নুরমান আলী সরদারের ছেলে অরাফাত হোসেন, শামছুর রহমান গাজীর ছেলে শাহাজান গাজী, রুইয়ারবিল গ্রামের জুলফিকার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন, একই গ্রামের শহর আলী গাজীর ছেলে হাফিজুর রহমান, আব্দুল হক সানার ছেলে মোঃ শাহীনুর আলম, দিঘালারাইট গ্রামের মোঃ আবু দাউদ জদ্দারের ছেলে মোঃ রাসেল, শ্রীপুর গ্রামের মোঃ রুহুল আমিন ঢালির ছেলে মোঃ শাহাজান ঢালী ও দৃষ্টিনন্দন গ্রামের মোঃ আনিচ সরদারের ছেলে নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার বন্যতলা গ্রামের আবু তালেব এর ছেলে শাহ্ আলম।
এছাড়া বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ইসলামাবাদ গ্রামের মোঃ মোস্তাহার সরদারের ছেলে মোঃ মতিয়ার সরদার, কাশিপুর গ্রামের খান হাসমত এর ছেলে খান রফিক, মোংলা থানার চিলা গ্রামের বাদল বিশ্বাসের ছেলে নীথন বিশ্বাস এবং খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের মোঃ গফুর মোড়লের ছেলে মোঃ রিপন মোড়ল।
অপহৃত শাহাজান গাজীর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, ডাকাতরা আমার স্বামীকে অপহরণ করায় তিনটি সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করার মত সক্ষমতা আমাদের নেই। অপহরণের খবর শোনার পর থেকে আমাদের নাওয়া খাওয়া নেই। বাচ্চা তিনটা তাদের বাবার জন্য খুবই ভেঙে পড়েছে। সারাদিন অপেক্ষায় থাকি কখন তার ফেরার খবর পাবো। 
কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, নিজেদের কোন ঘরবাড়ি না থাকায় চাকলা ক্লোজারের পাশে খুপড়ি ঘরে তিন সন্তান তানিয়া (২০), মামুন (১৮), ওসমান গণি (৮) ও স্বামীকে নিয়ে বসবাস করি। স্বামী ও কিশোর ছেলে মামুনের আয়ে চলে আমাদের সংসার। স্বামী মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার পর ছেলে মামুনও একজনের সাথে জঙ্গলে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন আগে সে ফিরে এসেছে। এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। জেলে দলের সভাপতি আব্দুর রউফ মেম্বরের ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছি। আমরা একরকম অসহায় হয়ে পড়েছি। আমরা কিছুই চাই না, আমার সন্তানদের বাবা যেন দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসে। তিনি অপহৃত সব জেলেদের উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী জানান, এই মুহূর্ত্বে প্রতাপনগরের সব চেয়ে আলোচিত ও দুঃখজনক ঘটনা হলো এই এলাকার ১০ জন জেলেকে অপহরণ করা। দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যজীবী বা জেলেরা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদে আলোরকোল-দুবলারচরের সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। প্রতিবছর প্রতাপনগর ইউনিয়নসহ আশেপাশের এলাকার বহু সংখ্যক জেলে শীত মৌসুমের শুরুতেই সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ জন জেলেকে এক সাথে অপহরণের ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম। এর আগে কখনো এই ধরনের ঘটনা এই এলাকায় ঘটেনি। অপহৃত জেলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে। যেহেতু প্রশাসনিকভাবে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তাই আমি অপহৃত জেলেদের পরিবারের সদস্যদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেছি। 
প্রসঙ্গতঃ গত ২৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবনের ডাকাত দয়াল বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরের নিরীহ জেলেদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় দুঃসাহসী জেলেরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদেরকে প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একই সাথে দুবলার চরের কোস্ট গার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে। ডাকাতদের সাথে জেলেদের হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা তিন ডাকাতকে  জাল দিয়ে ধরে ফেলে। কিন্তু এসময় ডাকাতরা সেখান থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। কোস্ট গার্ড ও বনবিভাগের সদস্যরা অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ