খুলনা | সোমবার | ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৪ ফাল্গুন ১৪৩১

সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়ে শক্তিধর

|
১২:৩৯ এ.এম | ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


দাম নিয়ন্ত্রণ করে বাজারকে সহনীয় পর্যায়ে আনার সরকারি চেষ্টায় কমতি নেই। সয়াবিন ও পামতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূসক কমানো, ডিমসহ কিছু পণ্যের দাম ধরে দেয়া ইত্যাদি পদক্ষেপের একমাত্র টার্গেট বাজার নিয়ন্ত্রণ। বাজারে গিয়ে মানুষ দিশেহারা। চড়া দামের জন্য বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। চাল, চিনি, পেঁয়াজ, তেল, আলু, সবজিসহ সব কিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চেলে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সমান্তরালে এই সিন্ডিকেট দমনও জরুরি। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া ও তাদের সাজার আওতায় আনার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে চক্রটি বুঝিয়ে দিয়েছে, এরা দমবে না। সরকার বা কেউ তাদের দমাতে পারবে না- এমন একটি ভ্যাংচি-আস্ফালন লক্ষণীয়। ক্ষমতাসীন সরকারটি অরাজনৈতিক। তাদের কোনো সিন্ডিকেট পোষার দরকার পড়ে না। সেই বিবেচনায় এ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে তাদের রুখে দেয়ার কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই। তারপরও কেন কুলাতে পারছে না সরকার? এর বিপরীতে সিন্ডিকেট বা চক্র রীতিমতো বেপরোয়া। তারা যথেচ্ছ দাম বাড়িয়ে লুটে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টের অর্থ। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক ও প্রধানতম উপকরণ হচ্ছে নিত্যখাদ্যপণ্য। এই খাদ্যপণ্যের মূল্য যখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন জনরোষের সাথে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়ে পারে না।
এ সরকারও মুক্তবাজার অর্থনীতির চর্চা করছে। এই ব্যবস্থায় ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার এবং ভোক্তাসহ সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষার কথা। কিন্তু বাস্তবটা বড় নিষ্ঠুর। বেশ কিছু পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদের ক্রিয়াকর্ম ঠিকই কার্যকর করে ছাড়ছে। ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটেনি বাজারে। দফায় দফায় দামের ডিগবাজিতে হতভম্ব ক্রেতা সাধারণ। সেই অস্থিরতা কাটাতে এবার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে। সা¤প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়, ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। সম্ভবত পাবলিক পালস ধরতে পেরেছেন এই অর্থনীতিবিদ ও এ্যাকাডেমিশিয়ান। তিনি বলেছেন, বাজারে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের অতিরিক্ত দামের জন্য সিন্ডিকেটের কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। এরা নিশ্চয়ই সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল­াহও রোগ ধরে বলেছেন, কাওরান বাজারে ডিম ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই চারবার হাতবদল হয়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?
এখন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। পুলিশ, শ্রমিক নেতা কিংবা দলীয় কোনো পারপাসে চাঁদাবাজি নেই। ট্রাক ভাড়াও আগের চেয়ে কমেছে। তারপরও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকার কারসাজি একদম না বোঝার বিষয় নয়। বিগত সরকারের আমলে বড় বড় যেসব সিন্ডিকেট ছিল, তারা এখনো রয়েছে। আর তাদের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম দিনকে দিন বাড়ছে। তবে কি, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ছাত্র-জনতাকে আবারো সক্রিয় হতে হবে? সরকার পতনের পর ছাত্ররা যেভাবে বাজার তদারকি করেছিল, সেটি আবারো নিয়মিত করতে হবে?
বলার অপেক্ষা রাখছে না, গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বাজার সিন্ডিকেটকারী ও চাঁদাবাজদের পতন হয়নি। নিত্যপণ্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে যারপরনাই সক্ষমতা দেখিয়েই চলছে তারা। সরকারের এখন পর্যন্ত কার্যক্রম ঘুরছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায়। 
মনে রাখতে হবে, ছাত্র-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মসনদ তছনছ করে দিয়ে তাকে দেশছাড়া করেছে, সেখানে দায়িত্বশীলরা কেন ফ্যাসিস্টের অনুসারী বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? কেন তারা বিপ্লবী চেতনায় নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারছেন না? সবাইকে মনে রাখা উচিত, এ সরকার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল এবং জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। বিপ্লবের যে প্রত্যাশা, তা সবাই এক হ ।

্রিন্ট

আরও সংবদ