খুলনা | সোমবার | ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২১ মাঘ ১৪৩১

মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা কানাডা-মেক্সিকো ও চীনের

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৬ পি.এম | ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করার পর, দেশগুলো পাল্টা অনুরুপ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে বর্তমান হারের চেয়ে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই দেশগুলোর পক্ষ থেকে পাল্টা ঘোষণা আসে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ১৫৫ বিলিয়ন ডলার সমমানের যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপর কার্যকর হবে মঙ্গলবার থেকে। বাকিটা পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে।

তবে এটি মার্কিন ডলার নাকি কানাডিয়ান ডলারে হবে সেটি তিনি পরিষ্কার করেননি।

হোয়াইট হাউজের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে ১০ শতাংশেরও কম শুল্ক দিয়ে তেল আমদানি করে থাকে।

ওদিকে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণাই দেবেন।

এদিকে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন।

ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর ফেন্টানিল সংকট মোকাবিলায় তিনি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুক্রবার হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছিলেন, অবৈধ ফেন্টালিন (এক ধরনের মাদক) যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাতকরণের জবাবে কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফেন্টালিন লাখ লাখ আমেরিকানকে হত্যা করেছে।

চীন, কানাডা এবং মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। দেশটি ৪০ শতাংশ পণ্য এসব দেশ থেকে আমদানি করে থাকে।

আমরা পিছু হটবোনা: জাস্টিন ট্রুডো
জাস্টিন ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কানাডিয়ান এবং আমেরিকানদের জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহ কঠিন হবে।

তার মতে, আমেরিকানদের বাণিজ্যিক পদক্ষেপ ও জবাবে কানাডার পদক্ষেপের প্রকৃত পরিণতি বহন করতে হবে সীমান্তের উভয় পাশের মানুষ ও কর্মীদের।

‘আমরা এটা করতে চাইনি। কিন্তু কানাডিয়ানদের স্বপক্ষে দাঁড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সফল অংশীদারত্বের জন্য আমরা পিছু হটবো না’—যোগ করেন তিনি।

ফেন্টালিন নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, ‘এক শতাংশেরও কম ফেন্টানিল কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। কানাডা থেকে এক শতাংশেরও কম অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে যায়।’

ট্রুডো জোর দিয়ে বলেন, জীবন বাঁচাতে একসঙ্গে কাজ করার চেয়ে কানাডার বিরুদ্ধে এই বাণিজ্য পদক্ষেপ সর্বোত্তম উপায় হতে পারে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত হয়নি।

ট্রুডো এর আগে গত ডিসেম্বরে মার-এ-লাগোতে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তিনি জানান, যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক প্রযোজ্য হবে তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান বিয়ার, ওয়াইন, ফল, ফলের জুস, ভেজিটেবল, পারফিউম, পোশাক ও জুতা।

এছাড়া খেলাধুলার সামগ্রী, ফার্নিচার, প্লাস্টিক ও হাউজহোল্ড আইটেমও রয়েছে এই তালিকায়।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো আমেরিকার জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই পদক্ষেপের সরাসরি প্রভাব পড়বে পণ্যের দাম ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর।

জাস্টিন ট্রুডোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে কানাডার নেতারা সবাই একমত বলে জানা যাচ্ছে। কুইবেকের নেতা ফ্রানকয়েস লিগল্ট বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও প্রাদেশিক নেতারা সবাই ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের শক্ত জবাব দিতে সর্বসম্মতভাবে একমত।

কুইবেকের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যবসা করবে না।

কানাডা তার রপ্তানির ৭০ ভাগই রপ্তানি করে করে যুক্তরাষ্ট্রে এবং দেশটি অনেক দিন ধরেই অন্য অঞ্চলে রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলে আসছে।

লিগল্ট বলেন, কানাডা এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে বলেনি।

মেক্সিকো পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে: প্রেসিডেন্ট
সব মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন তার জবাবে শুল্কসহ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘মেক্সিকোর স্বার্থ সংরক্ষণে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ পদক্ষেপ সহ প্লান বি বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি লিডারস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, দেশগুলোকে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাজ করা উচিত।

অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে প্রেসিডেন্ট একটি সমঝোতার জন্য কাজ করছেন। চার দেশের নেতাদের চৌঠা ফেব্রুয়ারির আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করা উচিত। কারণ ব্যাপক ভিত্তিক শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

্রিন্ট

আরও সংবদ