খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

কাশ্মির নিয়ে ৩টি যুদ্ধ করেছি, প্রয়োজনে আরও ১০টি যুদ্ধ করব : পাকিস্তান সেনাপ্রধান

খবর প্রতিবেদন |
০২:৫৪ পি.এম | ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


ভারত-অধিকৃত কাশ্মির ভূখণ্ড নিয়ে আরও ১০টি যুদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনির। ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, কাশ্মির নিয়ে ৩টি যুদ্ধ করেছি, প্রয়োজনে আরও ১০টি যুদ্ধ করবে পাকিস্তান।

ভারতের সামরিক শক্তিকে পাকিস্তান ভয় পায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আজাদ কাশ্মিরের মুজাফফরাবাদের প্রবীণ ও নাগরিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটির সেনাপ্রধান আশ্বাস দেন, জাতির সামনে ক্ষণস্থায়ী নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, পাকিস্তান ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য এবং বৈধ কারণে কাশ্মিরি ভাইদের পাশে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।

জেনারেল আসিম মুনির বলেন, “পাকিস্তান ইতোমধ্যে কাশ্মিরের জন্য তিনটি যুদ্ধ করেছে এবং যদি আরও ১০টি যুদ্ধের প্রয়োজন হয় তবে পাকিস্তান সেই লড়াই করবে। পাকিস্তান ভারতের সামরিক শক্তি বা তার প্রযুক্তিকে ভয় পাবে না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কাশ্মির হচ্ছে পাকিস্তানের শিরাগুলোর প্রধান শিরা। এই শিরা কেটে গেলে মৃত্যু ঘটে। কাশ্মির আমাদের জীবন। কোনও সন্দেহ নেই— কাশ্মির একদিন স্বাধীন হবে এবং পাকিস্তানের অংশ হবে। পাকিস্তানই কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্য।”

তিনি বলেন, ভারতীয় নৃশংসতা এবং ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা শুধুমাত্র কাশ্মিরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে তাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে ক্ষমতার অধিকারীদের কণ্ঠস্বরে শোনা যায়, “আর পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ”।

জেনারেল আসিম বলেন, পাকিস্তান উন্নতির পথে রয়েছে, যারা বলছে দেশটি খেলাপি হবে তারা মিথ্যা বলছে। মাত্র এক বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দিয়ে পাকিস্তান এমনকি আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) এবং বিশ্বব্যাংককেও অবাক করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। পাকিস্তানের ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ ছাড়াও ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক রয়েছে। এমন মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এমন কোনও দেশ কখনোই খেলাপি হতে পারে না।

জেনারেল অসিম বলেন, তিনি তার কর্মজীবনের কিছু অংশ আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের (এজেকে) নীলম উপত্যকা, চাকোথি এবং পান্ডুর মতো মনোরম অঞ্চলে কাটিয়েছেন। তিনি আজাদ কাশ্মিরের পর্যটন প্রচারে তার গভীর আগ্রহও প্রকাশ করেন।

তিনি আহ্বান জানান, পাকিস্তানিদের উচিত তাদের বিনিয়োগ এই অঞ্চলে নিয়ে আসা, যেখানে স্থানীয়রা পর্যটন খাতে সেবা প্রদান করতে পারে এবং জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তিনি জানান, সরকার স্টারলিংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং শিগগিরই দ্রুততম ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে, তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

এছাড়া ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান - কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।

সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন - এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

অন্যদিকে জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মিরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত। সেসময় জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ