খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

গাজার মালিকানা নিতে চান ট্রাম্প, বিশ্বজুড়ে নিন্দা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৭ এ.এম | ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করতে চাওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনার নিন্দা জানাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও বৈরীপক্ষ নির্বিশেষে সবাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র গাজা ভূখন্ডের মালিকানা গ্রহণ করবে, ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে অন্যান্য দেশে চলে যেতে বাধ্য করা হবে এবং তারপর ভূমধ্যসাগর বরাবর এই অঞ্চলকে তার কথায় ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস বলেছে যে, ট্রাম্পের প্রস্তাব ‘শুধু আগুনে ঘি-ই ঢালবে’। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ... কোনো দেশকে আমাদের ভূমি দখল করতে বা আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না, যারা আমাদের ভূমি দখলমুক্ত করতে এবং আমাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রক্ত দিয়েছে, যার রাজধানী হবে জেরুজালেম।’
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব ‘গাজা উপত্যকা দখল ও ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করার আহŸানকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে’। আব্বাসের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার কোনো ভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।’
জাতিসংঘ : জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ট্রাম্পের বিবৃতিকে ‘খুবই বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এএফপিকে বলেন, ধারণাটির বিস্তারিত কিছু পরিষ্কার না হওয়ায় এটি একটি ‘সচেতন সমস্যা’ হিসেবে মন্তব্য করা কঠিন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক পরে জোর দিয়ে বলেন, দখলকৃত এলাকা থেকে লোকজনকে বহিষ্কার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের একটি মৌলিক নীতি, এবং সকল রাষ্ট্রকে এটি সুরক্ষা দিতে হবে।’ 
চীন : চীন গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের 'বাধ্যতামূলক স্থানান্তর'-এর বিরোধিতা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'চীন সর্বদাই মনে করে যে, ফিলিস্তিনিদের শাসন তাদের সীমানার মধ্যে থাকা উচিত, যা গাজা উপত্যকার পরবর্তীকালের শাসনের মৌলিক নীতি।’
ফ্রান্স : ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা কোনো ‘তৃতীয় পক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’ হওয়া উচিত নয়। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ফ্রান্স দুই রাষ্ট্রের সমাধান বাস্তবায়নের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাবে, যা ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।'
তুরস্ক : তুরস্ক ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর ‘আমরা বা এ অঞ্চলের কেউই মেনে নেবে না' এবং ‘এমন আলোচনা উত্থাপন করাও ভুল।’
মিসর : মিসর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে এবং গাজা উপত্যকা শাসনের জন্য কর্তৃপক্ষের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি দ্রæত গাজা পুনর্গঠনের আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন না করে গাজা পুনর্গঠন করতে হবে।’ কায়রোতে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ‘প্রাথমিক পুনরুদ্ধার প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব’ ও ‘ত্বরিত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার’ ওপর জোর দেন।
ব্রিটেন : প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ‘গাজায় ফিরে যাওয়ার অধিকার’ থাকতে হবে, এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জার্মানি : জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড। এগুলো ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করবে।’
অস্ট্রেলিয়া : প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার দেশের দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান আজ সকালে যেমন ছিল, গত বছর যেমন ছিল, তেমনই আজও রয়েছে।’ 
ব্রাজিল : প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের ধারণাটিকে ‘প্রায় অস্পষ্ট বিষয়’ বলে অভিহিত করেছেন। ব্রাজিলীয় রেডিওকে লুলা বলেন, ‘গাজায় যা ঘটেছে তা ছিল একটি জাতিগত নির্মূল অভিযান, এবং সৎভাবে বলতে গেলে, আমি জানি না, ইসরায়েলের সমর্থনদাতা যুক্তরাষ্ট্র গাজা সামলানোর জন্য সেরা জায়গায় রয়েছে কি না।’

্রিন্ট

আরও সংবদ