সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচাপতি আব্দুর রউফ আর নেই। এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আমরাতো আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। আবদুর রউফ দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিচারপতি আবদুর রউফের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল।
তার একান্ত সহকারী মোঃ তাওহিদ জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আপিল বিভাগের সাবেক এই বিচারক।  
তিনি বলেন, স্যার দুই মাস ধরে বেশ অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একটু আগে হাসপাতালেই মারা গেছেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার আনুষ্ঠানিকতাগুলো করে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে উনাকে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশের পঞ্চম সিইসি বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রæয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করা আবদুর রউফ লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৮২ সালে বিচারক হিসেবে যোগ দেন হাই কোর্টে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এইচ এম এরশাদ সরকারের পতন হলে দেশের প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক আবদুর রউফকে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আনেন। 
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে সেই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই প্রথমবারের মত তিন সদস্যের ইসি পায় বাংলাদেশ। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান সরে যাওয়ার পরদিন সিইসি হিসেবে যোগ দেন বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ।
নির্বাচন কমিশনার আমিনুর রহমান খান কয়েক দিনের মাথায় পদত্যাগ করলে তার জায়গায় আসেন বিচারপতি সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন হোসেন। তার সঙ্গী হন আগের কমিশনার বিচারপতি নঈম উদ্দিন আহমেদ। ওই কমিশনের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি। সেই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০ এবং আ’লীগ ৮৮ আসন পায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওই সময়ে রউফ কমিশন নির্বাচনী আইনে ব্যাপক সংস্কার আনে, জারি করা হয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ। মেয়াদের শেষ দিকে মাগুরা উপ-নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হলে সমালোচনার মুখে পড়ে রউফ কমিশন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই সিইসির পদ ছেড়ে বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ ফিরে যান আদালতে।
১৯৯৫ সালের জুনে হাই কোর্ট থেকে আপিল বিভাগের বিচারক হন বিচারপতি মোঃ আব্দুর রউফ। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রæয়ারি তিনি অবসরে যান।
অবসরের পর ফারইস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শরিয়াহ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক এই বিচারপতি। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’র কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার শোক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ 
মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। 
শ্রদ্ধা নিবেদনে হাইকোর্টের  : বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাইকোর্টে রোববার আধাবেলা বিচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বেলা ২টা থেকে বিচারকি কাজ বন্ধ রেখে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসন শাখা থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, মরহুম এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে রোববার বেলা ২টা থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ অহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হয়েছে।
সাবেক সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিচারপতি রউফের মৃত্যুতে এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানানো হয়েছে।
ইসির শোক :  বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুরূপ প্রকাশ করেছেন।