খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

হুমকির মুখে ইরান, পরমাণু অস্ত্র তৈরির অনুমতি দিতে খামেনির কাছে আবেদন

খবর প্রতিবেদন |
০২:০৬ পি.এম | ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


ইসরায়েলসহ পশ্চিমাদের ক্রমাগত হুমকির মুখে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার ফতোয়া প্রত্যাহারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি দাবি জানিয়েছে দেশটির ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা বলেছেন, শাসন টিকিয়ে রাখতে হলে খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে হবে।

আইআরজিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। খামেনির ওপর কমান্ডারদের এই আরজিকে অভাবনীয় বলা হচ্ছে। কারণ ২০০৩ সাল থেকে ‘পরমাণু অস্ত্র তৈরি হারাম’ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এই ফতোয়া মেনে চলছে ইরান।

দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বেশ কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার তাদের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এখন তারা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির অনুমতির জন্য সর্বোচ্চ নেতার প্রতি চাপ দিচ্ছেন।

এক কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘আমরা কখনই এত দুর্বল ছিলাম না। খুব দেরি হওয়ার আগে এটি পাওয়ার জন্য এটিই আমাদের শেষ সুযোগ হতে পারে।’

২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বৈঠকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি হারাম (ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা) এর কথা উল্লেখ করে ইরান। তবে অনুমান করা হয়, ২০০৩ সালে প্রথম এই ফতোয়া দেওয়া হয়। মৌখিক ওই ফতোয়ায় খামেনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, এ ধরনের অস্ত্র ইসলাম অনুযায়ী ‘সম্পূর্ণ হারাম’ বা নিষিদ্ধ।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও মার্কিন হুমকি বেড়ে যাওয়ায় অনেক ইরানি কর্মকর্তা তাদের মত পাল্টানোর কথা ভাবছেন। তারা বলছেন, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ওই ফতোয়াই একমাত্র বাধা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের নির্বাসিত অনেক বিরুদ্ধ মতাবলম্বীরা দাবি করেছেন যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

আমেরিকানরা প্রতারক জানিয়ে সম্প্রতি তাদের সঙ্গে আলোচনা না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। এ বিষয়টি উল্লেখ করে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইরানি কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘নেতা (খামেনি) আমেরিকানদের সঙ্গে আলোচনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিও নিষিদ্ধ করেছেন, যা তার কাছে (বর্তমান শাসন কাঠামো টিকিয়ে রাখার) একমাত্র পথ হতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি মূলক শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি, কিন্তু এখন এটি অর্জনের জন্য চাপ এবং যুক্তি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বর্তমান অস্তিত্বের হুমকি আমাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, এত দিন সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ মেনে চলা অনেক শীর্ষ কমান্ডারই এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পক্ষে মত দিচ্ছেন।’

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কট্টরপন্থী রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে খামেনির ওপর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর বেশ কয়েকজন ইরানি এমপি দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে পারমাণবিক নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

ইসরায়েলের সঙ্গে হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে গত বছর ইরানের একজন একজন সংসদ সদস্য বলেছিলেন, ইসলামে পরিস্থিতি ও সময়ের ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় রায় পরিবর্তন করা যায়। আরেক এমপি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের অবশ্যই একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করা দরকার এবং আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’

অক্টোবরে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলার চালানোর পর গত নভেম্বরে খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়া। তবে ইসলামিক রিপাবলিক যদি অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে আমাদের সামরিক কৌশল পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সামর্থ্য রয়েছে—শুধু একটি ধর্মীয় নির্দেশনা আমাদের তা থেকে বিরত রেখেছে।’

এদিকে, গত বুধবার আইআরজিসি সংশ্লিষ্ট এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে দাবি করা হয়, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে লেখা হয়, ‘আমাদের কাছে পারমাণবিক বোমা নেই, তবে যদি আমরা চাই তাহলে একটি বানাতে পারব।’

অবশ্য, ২০২৩ সালের ১১ জুন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছিলেন, ‘তেহরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে পশ্চিমারা চাইলেও ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে আটকাতে পারবে না।’

ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর মধ্যপ্রাচ্যে সমরাস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ ইরান পরমাণু কর্মসূচির গতি বাড়ায়। একই সঙ্গে নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন প্রজন্মের তথা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও তৈরি করে ফেলেছে। সম্প্রতি একাধিক ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি সামনে এনেছে তেহরান। এ নিয়েই পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির আড়ালে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে ইরান। এরইমধ্যে গত বুধবার (৫ ফব্রুয়ারি) দেশটির বিরুদ্ধে ফের গোপনে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অভিযোগ তোলে ফ্রান্স ও আলবেনিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন এনসিআরআই।

দাবি করা হয়, শাহরুদ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্রের কাজ চলছে। সেখানেই পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন ওয়ারহেড তৈরি করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়।

এছাড়াও গত ডিসেম্বরে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি এক বিবৃতিতে বলে, ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ‘নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা কোনো বেসামরিক কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।’

তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রকাশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের স্বার্থ নয় এবং আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না।’ ইসলামি বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

্রিন্ট

আরও সংবদ