খুলনা | বুধবার | ২৬ মার্চ ২০২৫ | ১১ চৈত্র ১৪৩১

ফিক্সিং : নিষিদ্ধের তালিকায় সাকিব-আশরাফুল নাসিরের পর নারী ক্রিকেটার সোহাগী

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১২:০৮ এ.এম | ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


বাংলাদেশের প্রাত্যহিক জীবনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন নাগরিকদের গা সওয়া হয়ে গেছে, ক্রিকেটারদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াও যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা কঠিন শাস্তিও পাচ্ছেন এ ধরনের ঘটনায়। তবু তালিকা বড় হয়েই চলেছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন নারী ক্রিকেটার সোহেলী আক্তার। তাঁকে মঙ্গলবার আইসিসি ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ বছরে বাংলাদেশের চার ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করল আইসিসি।
নারী ক্রিকেটার সোহেলী আক্তার : ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০২২ সালে। এরই মাঝে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ নারী দলের স্পিনার সোহেলি আক্তারের বিরুদ্ধে। আইসিসির অ্যান্টি-করাপশন নীতিমালার ৫টি ধারা লঙ্ঘনের দায়ে তাকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানেই বাংলাদেশ দলের এক সতীর্থকে ফিক্সিং প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সোহেলির বিরুদ্ধে। তবে যে ক্রিকেটারকে অসাধু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তিনি সেই ফাঁদে পা না দিয়ে আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশনকে (আকসু) বিষয়টি জানান।
যার ভিত্তিতে অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার (১১ ফেব্র“য়ারি) সোহেলিকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে আইসিসি। সোমবার থেকে তার এই শাস্তি কার্যকর হয়েছে। আইসিসির বিবৃতিতে জানানো হয় দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের ২.১.১, ২.১.৩, ২.১.৪, ২.৪.৪ এবং ২.৪.৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন সোহেলি। যেখানে ২.১.১ ধারায় রয়েছে- ম্যাচ ফিক্সিং বা যেকোনো উপায়ে খেলার ফলাফল, অগ্রগতি, আচরণ বা অন্যান্য দিক অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকা, যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ পারফরম্যান্স করাও অন্তর্ভুক্ত।
এ ছাড়া ২.১.৩ ধারায় বলা আছে- ম্যাচ ফিক্সিং বা বাজির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য ঘুষ বা অন্য কোনো পুরস্কার গ্রহণ, গ্রহণে সম্মতি প্রদান, প্রস্তাব করা বা গ্রহণের চেষ্টা করা। ২.১.৪ ধারায়, অন্য কোনো অংশগ্রহণকারীকে ওপরের যে কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য প্ররোচিত করা, উৎসাহিত করা, নির্দেশনা প্রদান করা বা কোনোভাবে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে।
আকসুর ২.৪.৪ ধারামতে-অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটকে বিলম্ব না করে দুর্নীতির জন্য করা কোনো প্রস্তাব বা আমন্ত্রণের সম্পূর্ণ তথ্য জানাতে ব্যর্থ হওয়া। ধারা ২.৪.৭-এ আছে, অ্যান্টি-করাপশন ইউনিটকে তদন্তে বাঁধা সৃষ্টি করা বা বিলম্ব করা, যার মধ্যে প্রাসঙ্গিক নথিপত্র বা অন্যান্য তথ্য গোপন করা, বিকৃত করা বা ধ্বংস করাও অন্তর্ভুক্ত।
সোহেলি আক্তার ২০২৩ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। তবে স্কোয়াডে থাকা আরেক ক্রিকেটারকে তিনি মুঠোফোনে ফিক্সিংয়ের বার্তা পাঠান অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের আগে। যেখানে ওই ক্রিকেটারকে বড় অঙ্কের টাকার লোভ দেখানোও হয়। যা ওই ক্রিকেটার জানিয়ে দেন আকসুকে। এর আগে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সোহেলির। ২০২২ সালে নিজের শেষ ম্যাচ খেলার আগপর্যন্ত তিনি ২টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সবমিলিয়ে তার উইকেট ১১টি।
মোহাম্মদ আশরাফুল : এক সময়ের বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় তারকা আশরাফুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএলে) ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে। পরে আশরাফুল এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন এবং জাতির কাছে ক্ষমা চান। পরে আশরাফুলকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফিক্সিংয়ের সঙ্গে আশরাফুলের জড়িত থাকার ঘটনায় বিরাট ধাক্কা খায় বাংলাদেশ ক্রিকেট। আশরাফুল সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৮ সালে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেও আগের সেই জায়গায় ফিরতে পারেননি। বছর পাঁচেক ক্রিকেট চালিয়ে এখন কোচিংয়ে যুক্ত আশরাফুল। সবশেষ বিপিএলে তিনি রংপুর রাইডার্সের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।
সাকিব আল হাসান : তারকাখ্যাতিতে অনেক আগেই আশরাফুলকে ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব। তবে এ ধরণের ঘটনায় তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসবে, সেটা ছিল কল্পনাতীত। ২০১৮ সালে দীপক আগারওয়াল নামের এক বুকির কাছ থেকে তিনবার প্রস্তাব পেয়েও যথা সময়ে কর্তৃপক্ষকে জানাননি তিনি। সাকিব পরিস্কার বুঝতে পেরেছিলেন আগারওয়াল তাঁর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জুয়ার কাজে তা ব্যবহার করবে। তবে এসিইউকে যথা সময়ে না জানানোই ছিল তাঁর অপরাধ। সাকিব নিজ থেকে সব দায় মেনে নিয়ে তদন্তের সময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করায় তিনি এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেও সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষটা মসৃণ হয়নি। পরে রাজনীতিতে যোগদান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনে সাকিব এখন দেশেও ফিরতে পারছেন না।
নাসির হোসেন : নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আইসিসি এনেছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি টি-টেন লিগে ২০২১ সালের আসরের ম্যাচে দুর্নীতির চেষ্টা করা হলেও সেটি ব্যাহত হয়এমন জানিয়েছিল আইসিসি। নাসিরসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল আইসিসি। তাঁদের মধ্যে একমাত্র নাসিরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। গত বছর জানুয়ারিতে শুধু নাসিরকেই নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছে আইসিসি। শাস্তির শর্ত পূরণ করতে পারলে আগামী ৭ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাসির ফিরতে পারবেন বলে জানায় আইসিসি।

্রিন্ট

আরও সংবদ