খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ : যুবদলের তিন নেতা ও বিএনপি’র এক কর্মী আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর |
১২:১৭ এ.এম | ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


যশোরের বড় হৈবতপুর গ্রামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। এতে যুবদলের তিন নেতা ও বিএনপি’র এক কর্মী গুরুতর জখম হয়েছে। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহতরা হলেন, হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাজু (৪৪), ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং ৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধক্ষ পাপ্পু। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের শফি নামে একজন নিজেকে আহত হবার দাবি করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে হৈবতপুরের বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েন। হাসপাতাল চত্বরেই শফিকে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চাষাবাদের জমি রয়েছে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামের মাঠে। তাদের মধ্যে রয়েছেন চুড়ামনকাটি ইউপি মেম্বর ও সমালোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমানের। অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের শাসন আমল থেকেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আনিছুর নিজের জমিতে সেচের পানি দিতেন হৈবতপুর ইউনিয়নের বাসীন্দাদের জমির আইল কেটে। এর প্রতিবাদ করার কারো সাহস ছিলো না। ঠিক একই ভাবে মঙ্গলবার অন্যের জমির পানি নিজের জমিতে দেয়ার জন্য আইল কেটে দেন আনিছসহ তার লোকজন। এ ঘটনায় গ্রামবাসী প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে আনিছুর নিজ এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে লোকজন ডাক দেয়। কিছু সময়ের মধ্যে ৫০/৬০ জন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে চলে আসে। এ খবর পেয়ে বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীও সেখানে চলে আসেন। সে সময় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন যুবদল নেতা রাজু। বিষয়টি দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসাও হয়ে যায়। পরে হৈবতপুরের লোকজন ফিরে যাচ্ছিলেন বাড়ির দিকে। এমন সময় আনিছের নেতৃত্বে শফিক, তৌহিদ এবং রমজানসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হৈবতপুরের লোকজনের উপর আতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের গুরুতর জখম করে। এতে আহত হন ওই চারজন। এ সময় হৈবতপুরের আরও লোকজন ছুটে আসলে আনিছ মেম্বরের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা অন্যদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এ ঘটনার সাথে জড়িত আনিছের সহকারী শফিকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা জেনারেল হাসপাতালে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে হাসপাতাল চত্বরেই মারপিট করে।
হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের শাসন আমলে এই আনিছ মেম্বর যা ইচ্ছে তা করেছেন। গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তার নেতৃত্বে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, হৈবতপুরের মাঠ থেকে সাধারণ মানুষের ফসল কেটে নিযে যাওয়া, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবিসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো হৈবতপুরবাসী। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। সরকার পতনের পর থেকে আনিছচক্র আত্মগোপন করে। কিন্তু স¤প্রতি ফের প্রকাশ্যে এসে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে আনিছ বাহিনী।
যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠার চেষ্টা করছে। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীর উপর হামলা চালিয়েছে। এসময় গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে আহত হয়েছেন যুবদলের নেতা-কর্মীরা। তিনি জড়িতদের দ্রুত আটকের দাবি জানিয়েছেন ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার মিঠুন কুমার জানান, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় বেশ কয়েকটি ক্ষত রয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী বাবুল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ