খুলনা | শুক্রবার | ১৪ মার্চ ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে গঠিত : হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৩ এ.এম | ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত ও বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা গঠিত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট খারিজের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। 
এর আগে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান এবং এর ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। 
তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ। 
শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ বুধবার প্রকাশিত হয়। 
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনও আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) বক্তব্যে এসেছে। উলে­খ করা প্রাসঙ্গিক যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত। 
পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ এবং আশা করি, আগামী বহু বছর ধরে জনগণ যতেœ থাকবে।
রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক উলে­খ করে তা সরাসরি খারিজ করা হয়। 
গণ-অভ্যুত্থানের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন এবং ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। একই দিনে তিনি সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন এবং উপদেষ্টারা শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ রেফারেন্স (১/২৪) পাঠান, যার ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মতামত দেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর বক্তব্যে এসেছে। উলে­¬খ করা প্রাসঙ্গিক যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।
পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ এবং আশা করি আগামী বহু বছর ধরে জনগণ যতেœ থাকবে।’
রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক বলে উলে¬খ করে তা সরাসরি খারিজ করা হয়েছে বলে আদেশে উলে¬খ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের মতামতে বলা হয়েছে, দেশের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারেন এবং এটি সংবিধানের পরিপন্থী নয়।
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ তাঁর রিটে যুক্তি দেন, সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কোনো বিধান নেই, ফলে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া বেআইনি। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করা হয়নি, বিশেষত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যান্য পক্ষকে নোটিশ প্রদান ও শুনানির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি দেয়, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ করা হয়েছিল এবং তিনি শুনানিতে অংশ নেন। এই যুক্তি বিবেচনায় এনে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি খারিজ করে দেন।
স¤প্রতি প্রকাশিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত এবং এটি কোনো বেআইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়নি।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয় : ১. অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন, যা আইনগতভাবে সমর্থিত। ২. ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং এটি ভবিষ্যতে জনগণের স্মরণে থাকবে। ৩. রিটটি ছিল ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক, তাই এটি সরাসরি খারিজ করা হয়।
বাংলাদেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের মতামত ও হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এটি বৈধতা পেয়েছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে আইনসম্মত বলে গণ্য করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ