খুলনা | সোমবার | ৩০ জুন ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ, নানা অনুষ্ঠান

একুশ বাঙালি জাতির অহঙ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:০৭ এ.এম | ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


আজ একুশে ফেব্র“য়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির।মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অনন্য ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই দিনটিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হতো। আজ বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।
খুলনাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যদায় এ দিবসটি পালিত হবে।  রাজধাানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহিদদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশ’র মহান ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশ’র কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহিদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। 
এদিকে মহান ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন। 
প্রসঙ্গক্রমে উলে­খ্য যে, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশী বাঙালিদের জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অন্যদিকে, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। 
১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ববাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন।
তাদের এই আত্মদান নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম তার ‘বায়ান্নর ও আগে’ এক প্রবন্ধে লিখেছেন ‘বরকত, সালামকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা বরকত সালাম আমাদের ভালোবাসে। ওরা আমাদের ভালোবাসে বলেই ওদের জীবন দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করেছেন। ওরা আমাদের জীবনে অমৃতরসের স্পর্শ দিয়ে গেছে। সে রসে আমরা জনে-জনে, প্রতিজনে এবং সমগ্রজনে সিক্ত।’
‘এদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে আমরা অমরতা পেয়েছি’ উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা বলতে পারি দস্যুকে, বর্বরকে এবং দাম্ভিককে : তোমরা আর আমাদের মারতে পারবে না। কেননা বরকত সালাম রক্তের সমুদ্র-মন্থন করে আমাদের জীবনে অমরতার স্পর্শ দিয়ে গেছেন।’
বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবুল ফজল একুশ নিয়ে তার এক লেখায় লিখেছেন ‘মাতৃভাষার দাবি স্বভাবের দাবি। ন্যায়ের দাবি, সত্যের দাবি, এ দাবির লড়াইয়ে একুশে ফেব্র“য়ারির শহিদরা প্রাণ দিয়েছেন। প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন, স্বভাবের ব্যাপারে, ন্যায় ও সত্যের ব্যাপারে কোন আপোষ চলে না, চলে না কোন গোঁজামিল। জীবন-মৃত্যুর ভ্রকুটি উপেক্ষা করেই হতে হয় তার সম্মুখীন।’
একুশে ফেব্র“য়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। 
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 
আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সকল মসজিদে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।  
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা জনক স্থানগুলোতে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা স¤প্রচার এবং ভাষা শহিদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহিদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহিদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইত্যাদি জনসচেতনতা মূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
খুলনায় নানা অনুষ্ঠান : দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে খুলনা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২১ ফেব্র“য়ারির দিনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। 
ঐদিন সকাল সাড়ে নয়টায় নগরভবনে সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর বা সুবিধামত সময়ে সকল মসজিদে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাত, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া এবং মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। প্রার্থনার সময় ভাষা শহিদদের সঠিক নাম ব্যবহার করতে হবে। বিকেল চারটায় বয়রাস্থ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে অমর একুশের বইমেলার মঞ্চে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় শহিদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা তথ্য অফিস চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও একুশের পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। 
শহিদ হাদিস পার্কে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছড়া পাঠ, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, এর পরপরই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ১০টায় সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা, বাদ জুম্মা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রার্থনা, সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বলন। এছাড়াও বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।  
খুলনা সিটি কর্পোরেশন : দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং শহিদ হাদিস পার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়সমূহ বাংলা বর্ণমালা ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। এছাড়া সকাল ৯টায় নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং বেলা ১১টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 
খুলনা বিএনপি : দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে খুলনা বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার সূর্যোদয়ের সাথে সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় নগরীর গোলকমনি শিশু পার্কে দলের নেতা-কর্মীদের জমায়েত। সকাল সাড়ে ৭টায় শহিদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনারে পুষ্পমার্ল্য অর্পণ। 
খুলনা প্রেসক্লাব : দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ২১ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ