খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ শুরু

|
১২:২০ এ.এম | ০১ মার্চ ২০২৫


বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ঘোষণার মাস মার্চ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ হয় শুরুর মাস মার্চ। এই মাসেই এদেশের মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে অধিকার অর্জনে আন্দোলন শুরু করে। যা পরে গণ আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এই অগ্নিঝরা মাসেই এদেশের মানুষের রাজনৈতিক আন্দোলন পরিণতি পেয়েছিল, যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলার আন্দোলন-সংগ্রামের ঘটনাবহুল ও বেদনাবিধুর স্মৃতি বিজড়িত ১৯৭১-এর এই মার্চ মাস, একইসঙ্গে গৌরব ও অর্জনেরও মাস এই মার্চ। একাত্তরের ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকার রাজপথে চালায় ইতিহাসের স্মরণকালের বৃহত্তর গণগত্যা। তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জনযুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে এসে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন- সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হলেও চূূড়ান্ত আন্দোলনের সূূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই। এ দিন সারা দেশই ছিল অগ্নিগর্ভ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি এবং অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ বেতারে এ ঘোষণা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এ সময় তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলার মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আ’লীগের সংসদীয় দলের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো স্লোগান দেন, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকাসহ গোটা দেশ।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পূর্বাণী হোটেলেই শেখ মুজিবুর রহমান আ’লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছিল বিক্ষুব্ধ বাঙালির কঠোর কর্মসূচির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান। বৈঠক শেষে ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রতিবছর মার্চ মাস আসলেই বাঙালি জাতি নতুন করে শপথ নেয়। তবে এবার ভিন্ন পরিবেশে অগ্নিঝরা মার্চ জাতির সামনে এসেছে। আর তা হলো ‘২৪-এ জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পর গোটা জাতি পালন করবে মার্চ মাস। স্বাধীনতার মূল দাবি ও মন্ত্র পাশ কাটিয়ে বিনাভোটে জোর করে এ জাতির কাঁধে চেপে বসেছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে জাতি মুক্ত হয় ফ্যাসিবাদ থেকে। তাই এবারের স্বাধীনতার মাস মার্চ হবে তরুণ প্রজন্মের জন্য এক ঐক্যের মহামিলনের মাস। যার লক্ষ্য হবে আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্র, মানবিক ও সাম্যের। এটাই আমাদের হোক প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ