খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

পদত্যাগ করেও শেষ রক্ষা হলো না হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে দুদক

পারভেজ মোহাম্মদ |
০২:০৫ এ.এম | ১২ মার্চ ২০২৫


পদত্যাগ করেও শেষ রক্ষা হলো না হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় এবার তদন্তে নামছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশন। 
অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় নথি নম্বর ০০.০১.১৮০০.৬৪৪.০১.০১.১৮.৪০৩৯০ এবং ০০.০১.৫০০০.০২.৩২৩-২০ স্মারকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের অধীনে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিধি বহির্ভূতভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিষয়ে সূত্রে বর্ণিত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকার সহকারী পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক  সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে অবগতি ও জ্ঞাতার্থে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সচিব,  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব,  দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় খুলনার পরিচালক,  দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন), নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত বিভাগীয় কার্যালয় খুলনার উপ-পরিচালক,  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, যশোর অঞ্চল খুলনার উপ-পরিচালক ও হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কপি সরবরাহ করা হয়েছে। 
উলে­খ্য পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে  বিদ্যালয়ের ১৪ জন সহকারী শিক্ষক (১৬ জনের মধ্যে) স্বাক্ষরিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ পত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকদের লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি বিনামূল্যে বিতরণকৃত সরকারি পাঠ্য বই গোপনে বাজারে বিক্রির লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। সরেজমিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক জানান,  প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস একটি বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে শুরু হয় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান মোড়ল, সঞ্জয় কুমার পাল ও বাবলু কুমার হরি এর কাছ থেকে বিএড স্কেল ও এমপিও ভুক্তির জন্য ২৫ হাজার টাকা, এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ সবুর সরদার, সঞ্জয় কুমার পাল ও পল­ব কুমার হরির কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক এর স্বাক্ষর গ্রহণে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও বিল করিয়ে দিতে অনুরূপ তিনজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক অনীশ রঞ্জন চক্রবর্তী ও ঈশিতা রানী কাছ থেকে অনৈতিকভাবে ২০ হাজার টাকা ও পাসওয়ার্ড দেখানোর নামে ১০ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করেন এই প্রধান শিক্ষক। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দের। এছাড়া ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত লক্ষাধিক টাকা ফি আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন। সরকার প্রদত্ত পিবিজিএসআই অনুদানের ৫ লক্ষ টাকা অসামঞ্জস্য ও ত্র“টিপূর্ণ ভাউচার দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন দুর্নীতিবাজ এ প্রধান শিক্ষক। নিজের শক্তিশালী খুঁটির জোর দেখিয়ে প্রকাশ্যে একজন সহকারি শিক্ষকের জামার কলার চেপে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে লাঞ্ছিত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের। শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রাপ্য টিউশন ফিস দীর্ঘদিন না দেওয়া এবং বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত মনগড়া অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট তৈরি করে নিরীক্ষার কোন সুযোগ না দিয়ে একান্ত অধীনস্থ শিক্ষকদের দিয়ে  নামমাত্র কমিটি তৈরি করে স্বাক্ষর সম্পাদন করেন প্রধান শিক্ষক।  বিদ্যালয় এর অপদর্শিত আয় (প্রশংসাপত্র মূল সনদপত্র) নিজে আত্মসাৎ করার পাশাপাশি বিগত দিনে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের টাকার কমিশনও গ্রহণ করেছেন এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক। এছাড়া এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অদ্যাবধি পাঠদানের উদ্দেশ্যে শ্রেণিকক্ষে কখনো প্রবেশ করেননি এমন অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রীদের। উলে­খ্য ইতোপূর্বে হীন স্বার্থচরিতার্থ করার স্বার্থে বিগত সরকারের আমলে ৬ জন নিরীহ ছাত্রকে স্কুল থেকে লিখিতভাবে বহিষ্কার করার মত ঘৃণ্য কাজটিও করেছিলেন এই প্রধান শিক্ষক। 
ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের সুনাম রক্ষার্থে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী। 
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, আমি সাহস নিয়ে বলতে পারি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। ওরা রুলস এন্ড রেগুলেশন বোঝে না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে আমি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। তদন্ত হোক। ঘটনা সত্য হলে আইনগত যে ব্যবস্থা নেবে মেনে নেব। 
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। ঐদিনই প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন। সর্বশেষ এই ঘটনায় ২৫ ফেব্র“য়ারি স্বাক্ষরিত  দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় হতে বিষয়টি তদন্তে সহকারী পরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (বিঃ অনু ও তদন্ত-২) প্রধান কার্যালয়। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ