খুলনা | সোমবার | ১৭ মার্চ ২০২৫ | ৩ চৈত্র ১৪৩১

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর সুপারিশ

রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে : সিপিডি

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৫ এ.এম | ১৭ মার্চ ২০২৫


বছর শেষে বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পৌঁছাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। 
রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এমন মন্তব্য করেন। জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এই মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল ও সাঈদ ইউসুফ শাদাৎ প্রমুখ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি যদি দেখি, সেটি খুবই দুর্বল। এই সময়কালে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪.৪ শতাংশ। গত বছরের আদায় যেহেতু কম হয়েছে, সেই ঘাটতি এবং এ বছরের জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাকি সময়ে পূরণ করা আসলে প্রায় অসম্ভব বিষয়। আমরা মনে করি, বাকি অর্থবছরে আরো যেসব জায়গায় থেকে কর আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেও আমরা যদি হিসাব করি, বছর শেষে বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পৌঁছাতে পারে।
তিনি বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, সেখানে আমরা দেখব যে, সেখানে মূল বাজেট ব্যবহারের হার ছিল ২৮.৩ শতাংশ। এটা ২৪ অর্থবছরের তুলনায় একটু বেশি। অন্যদিকে আমরা দেখি, ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে গেছে। জুলাই-ডিসেম্বরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। যা ২০২৪ এর একই সময়ে অনেক কম ছিল।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ফেব্র“য়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে গ্যাসের দামের যে প্রস্তাব আছে সেটা যদি অনুমোদিত হয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির ধারা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে বলছে চলতি বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনবে সেটা বাস্তবে অর্জন নাও হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে উলে­খ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমাতে হবে। এসএমই সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, চ্যালেঞ্জপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বাজেট প্রণয়ন করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহে স্থবিরতা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব। ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এটি মোকাবিলায় দূরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মুদ্রানীতির স্থিতিশীলতা আনয়ন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম কাজ। এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃখলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সূচারুভাবে সম্পন্ন করাই মূলনীতি হওয়া উচিত। সেটা করতে হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করা,  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয়গুলো মাথায় রেখেও বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। বাজেট প্রস্তাবে সিপিডি জানায় ৬০টি পণ্যের শুল্কহার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে যাতে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় থাকে। যাতে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ধাক্কাটা আমরা সামলে আনতে পারি। রপ্তানিকারকদের সহায়তা করার জন্য অন্য ধরনের সহায়তার কথা চিন্তা করতে হবে।
বাজেট প্রস্তাবে এনবিআরের সংস্কার আনার কথা জানায় সিপিডি। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে আধুনিক রাজস্ব কাঠামো প্রণয়ন, ডিজিটালাইজেশন করা, সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি তৈরি করা, ঝামেলামুক্ত ভাবে কর দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সিগারেট, জর্দা, বেভারেজ পণ্যে কর ভার বেশি করা, শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি। জুলাই বিদ্রোহের সময় যারা আহত বা অক্ষম ছিল তাদের স্নাতক ডিগ্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার অর্থায়নের জন্য ২০২৬ অর্থবছরে একটি বৃত্তি কর্মসূচি চালু করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ