খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন

মুফতি রবিউল ইসলাম রাফে |
০১:৩২ এ.এম | ২১ মার্চ ২০২৫


আজ ২০ রমজান। আজ সন্ধার পর থেকে মসজিদে ইতিকাফ শুরু হবে।  ইতিকাফ বা এতেকাফ  আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো অবস্থান করা বা কোন স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। আর শরিয়তের পরিভাষায়, এক বিশেষ সময়ে এক বিশেষ নিয়মে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলা হয়। ইতিকাফ করা বহু পূণ্যের কাজ, তবে আমলটি সুন্দর হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা খুবই জরুরি।  ইতিকাফ তিন প্রকার। ওয়াজিব ইতিকাফ, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ ও নফল ইতিকাফ। ইতিকাফ এমন একটি গুরুত্বপূর্র্ণ ইবাদত, যা ইসলাম পূর্ব যুগ থেকে বিদ্যমান। ওয়াজিব ইতিকাফ বলা হয় যা কোন ব্যক্তি মানতের মাধ্যমে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেয়। সুন্নাতে মুআক্কাদা ইতিকাফ, রমযানের শেষ দশকে অর্থাৎ ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের চাঁদ উঠা পর্যন্ত, পূর্বসময় ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে বলা হয়। আব্দুল­াহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল­াহ (সাঃ) রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন (সহীহ বুখারী: ২০২৫)। আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারীম (সাঃ) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর ইতিকাফ করেননি। এর পরের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন (সুনানে তিরমিযী: ৮০৩)। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ করলে শবে কদর পাওয়া নিশ্চত হয়। নফল ইতিকাফ হল, বছরের যে কোন সময়ে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশকে দশদিনের কম মসজিদে অবস্থান করলে সেটাও নফল ইতিকাফ হবে। ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত করা ছাড়া মসজিদে অবস্থান করলে সেটা ইতিকাফ বলে গণ্য হবে না।  পুরুষরা জামে মসজিদ বা পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ করবে। এছাড়া অন্যত্র ইতিকাফ করলে সেটা ইতিকাফ হবে না। ওয়াজিব ইতিকাফ আদায় করার জন্য রোযা রাখা আবশ্যক, রোযা রাখা ব্যতিত তা আদায় হবে না। আর সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ তো রমযানেই হয়ে থাকে, তাই তা রোযা রাখা ব্যতিত আদায় হবে না। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ আদায়ের জন্য শুরুতেই পুরো দশদিন ইতিকাফের নিয়ত করবে। এক সাথে দশদিন ইতিকাফের নিয়ত না করলে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ আদায় হবে না। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফের জন্য বিশ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। সূর্যাস্তের সময় মসজিদে না থাকলে তার সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ইতিকাফ আদায় হবে না। ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকাকে ইবাদত মনে করে চুপ থাকা মাকরূহ। ইতিকাফের আদব হলো, সর্বদা ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবে। যিকির-আযকার তিলাওয়াত করবে।  অনর্থক কথাবার্তা ও কাজ কর্মে লিপ্ত হবে না এবং কিছু দ্বীনী কিতাবাদী পড়বে ও অন্যকে পড়ে শুনাবে। গ্রহণযোগ্য ওজর ছাড়া এক মুহুর্তও মসজিদের বাইরে অবস্থান করলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। মহিলারা ও তাদের ইতিকাফের নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্যত্রে গ্রহণযোগ্য ওজর ছাড়া সামান্য সময় অবস্থান করলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। অসুস্থতার কারণেও সামান্য সময় বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। এতেকাফ অবস্থায় ভুলেও মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। কোন ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার অথবা কাউকে অগ্নিকান্ড থেকে উদ্ধারের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। ফরজ গোসল ও সুন্নাত গোসল ছাড়া সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। শেষ দশকের কোন একদিন রোজা ভেঙে গেলে অথবা কোন কারণে রোযা রাখতে না পারলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। 
লেখক: আরবী সাহিত্যিক ও মুহাদ্দিস, জামি’য়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলূম, বাগমারা, খুলনা।

্রিন্ট