খুলনা | বুধবার | ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত প্যানেল চেয়ারম্যানের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফুলতলা প্রতিনিধি |
০১:৩৯ এ.এম | ২১ মার্চ ২০২৫


খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত ফুলতলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা  ফারুখ মোল­ার (৪৮)মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ১১টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আছর জানাজার পর পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফুলতলা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। তবে পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। 
এর আগে বুধবার দুপুরে উপজেলার বেজেরডাঙ্গা মধ্যপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। নিহত ফারুখ মোল­া উপজেলার পয়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা  হাসেম মোল­ার ছেলে। ফারুখ মোল­ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুলতলা থানার ডিউটি অফিসার এসআই মোঃ শফিকুল ইসলাম।  
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ফারুক বেলা ১১টার দিকে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সদর ইউনিয়ন পরিষদে যান। পরে কোনো এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে তিনি মোটরসাইকেলে বেজেরডাঙ্গা রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। মধ্যডাঙ্গা সাবেক সেনাসদস্য মিজানুরের বাড়ির সামনে আসলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা তার গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডান হাত ভেঙে এবং বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে গুরুতর অবস্থায় ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ফুলতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ফারুক মোল­াকে কুপিয়ে জখমের খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় তার কোমর থেকে এক রাউন্ড গুলিসহ রিভলবার উদ্ধার এবং অগ্নিসংযোগকৃত মোটরসাইকেলটির আগুন নিভানো হয়। ফুলতলার ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফারুক মোল­াকে ২টি হত্যা মামলায় আদালত ৭৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। তবে উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দু’পায়ের এবং মাথায় আঘাত করে। দুর্বৃত্তের অস্ত্রের আঘাতে তার পায়ের রগ কেটে যায়। তার মাথার পেছনের আঘাতটি খুবই গুরুতর ছিল। ওই আঘাতের কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য রাতে তকে আইসিইউ সাপোর্টেড এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় পৌঁছালে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। তখন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানাকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতে তার মরদেহ ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রামে নেওয়া হয়।
নিহত ফারুক মোল­ার স্ত্রী মাফুজা বেগম (৪০) বলেন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফুলতলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার মোবাইল ফোনে পরিষদের বকেয়া সম্মানী প্রদানের কথা বলে স্বামীকে যেতে বলেন। ৪নং ওয়ার্ড মেম্বর ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক পরিষদে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাজ শেষে চেয়ারম্যান তাকে নিরাপদে মধ্যডাঙ্গা জুড়োকোর্টের রাস্তা দিয়ে চলে যেতে বলে। ফারুক সে অনুযায়ী ওই পথ দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে মধ্যডাঙ্গা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে তার ঘাড়ে সজোরে আঘাত করলে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে হাতুড়ি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে হাত, পা, কোমর, বুক, মাথাসহ গোটা শরীরে উপর্যুপুরি আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে। তার ডান হাত মটকে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে দ্রুত রক্ত ক্ষরণের জন্য বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। যাওয়ার সময় তার ব্যবহৃত  মোটরসাইকেলটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বন্দুকের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল­াস করতে করতে একটা সাদা রংয়ের মাইক্রো বাসে করে চলে যায়। 
পরে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে স্ত্রী মাফুজা ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। সেখানে না পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুককে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে এবং  মোটরসাইকেলে আগুন জ্বলতে দেখেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মোটরসাইকেলের আগুন নিভানো ও ফারুককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়। দ্রুত ফারুককে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক তার স্ত্রী ও কন্যার সামনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, তার ভাইপো, সাবেক দুই ইউপি সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে ওপার বাংলায় আশ্রিত গিয়াস বাহিনীর প্রধান ও তার ভাইপো শুভসহ ১২ জনের নাম উলে­খসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনের নাম বলেছেন বলে স্ত্রী মাফুজা জানিয়েছেন। তবে ক্রমশ অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে রাত ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ এলাকায় পৌঁছানোর পর তার মৃত্যু ঘটে। বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পয়গ্রামস্থ তার বাসভবনে আনা হয়। বাদ আছর জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় ওই সূত্রটি আরও জানায়, নিহত ফারুখ মোলা চরমপন্থি দলের সদস্য ছিলেন। তিনি জেলা পুলিশের ৫নং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ফুলতলা থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি গ্যাংয়ের প্রধান বলে আরও জানা গেছে।
ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  মনিরুজ্জামান বলেন, ইউপি সদস্য ফারুক মোলাকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থা অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে এমন খবর তিনি জেনেছেন। রাতে তার মরদেহ ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রামে তাদের বাড়িতে নেওয়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি।

্রিন্ট

আরও সংবদ