খুলনা | বুধবার | ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ, যুবদল ও জানাক নেতাসহ ৫ জনকে একদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০৪:৪৮ পি.এম | ২৩ মার্চ ২০২৫


খুলনায় ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) সোনাডাঙ্গা থানা শাখার নেতা ইমন মোল­াসহ ৫ জনকে একদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পলিশের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মোঃ আল আমিন এ আদেশ দেন। পরে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে রোববার আদালতে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
গ্রেফতার ৫ জন হলেন খুলনা মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু (৫৫), জাতীয় নাগরিক কমিটি খুলনার সমন্বয়ক ইমন মোল­া (২৪), জিয়াউস সাদাত (৪৮), ইমনের সহযোগী জয় হাসান (২২) এবং সাকির রহমান (২২)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২১ মার্চ রাতে মামলার বাদী কৌশিক আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সোনাডাঙ্গা থানাধীন বসুপাড়া এতিমখানা মোড় নর্থখাল ব্যাংক রোডস্থ সোহরাব হোসেনের ভাড়া বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ওই সময়ে এ মামলার অভিযুক্ত আসামি মোঃ জিয়াউস সাদাত ওরফে জিয়া, ইমন মোল­া, মোঃ মাহাবুব হাসান পিয়ারুল, মোঃ জয় হাসান এবং মোঃ শাকিব রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন আসামি বাদীর বাসার সামনে গিয়ে নিজেদেরকে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। বাদীর বাবা বাসার দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে আসামিরা অনাধিকারে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে নুরে আলমকে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং মারমুখী আচরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা নুরে আলমের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। না হলে ডিবি পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। আসামিদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাদীর বাবাকে ডিবি পুলিশের নিকট হস্তান্তরের কথা বলে বাসা থেকে জোর পূর্বক তুলে নেওয়া হয়। এরপর তাদের জানানো হয় ১ কোটি টাকা না দিলে তার বাবাকে জীবনের তরে শেষ এবং পুলিশকে জানালে বাবার লাশ পাবে বলে হুমকি প্রদান করে যায় তারা। পরে এ মামলার অপর আসামি ইমন মোল­া ২২ মার্চ রাত দেড়টার দিকে কৌশিকের বাড়িতে গিয়ে আসামিদের ব্যবহৃত হোয়ার্টসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে বাদীর বাবার সাথে কথা বলানোর ব্যবস্থা করে। ওই সময়ে মুক্তিপণের ১ কোটি টাকার জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে।
আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, ওইদিন সকাল ১০টার দিকে আসামিরা পুনরায় বাদীকে মুক্তিপণের টাকার জন্য হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামি জিয়াউস সাদাত ফুলমার্কেটস্থ চেম্বারে বাদীকে সমঝোতার কথা বলে ডেকে নেয়। এর কিছুক্ষণ পর আসামি ইমন মোল­াসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন জিয়াউস সাদাতের চেম্বারে আসে। আসামিরা মুক্তিপণের ১ কোটি টাকা থেকে টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে কৌশিক আসামি জিয়ার চেম্বার থেকে বের হয়ে আসার কিছুক্ষণ পর আসামি ইমন মোল­া বাদীর ছোট ভাই আবিদ হাসানকে ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে বলতে থাকে দ্রুত টাকা না দিলে আপনার পিতাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, বাবাকে উদ্ধারের জন্য কৌশিক মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের শরণাপন্ন হয়। পরবর্তীতে পুলিশের ফাঁদে শনিবার রাত সোয় ১০টার দিকে শেরে  বাংলা রোডস্থ স্বপ্ন রেন্ট এ কারের সামনে থেকে আসামি ইমন মোল­া, মাহাবুব হাসান পিয়ারুল এবং জয় হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মাহাবুব হাসান পিয়ারুল এবং জয় হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা একপর্যায়ে বাদীর বাবাকে অপহরণ ও গল­ামারী কাশেম সড়কের ৪র্থ তলার একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে পুলিশের নিকট স্বীকার করে। তাদের সেখানে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপহৃত ব্যক্তি নুরে আলমকে উদ্ধার পূর্বক আসামি মোঃ শাকিব রহমানকে মোবাইলসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ মামলার ১নং আসামি জিয়াউস সাদাত ওরফে জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ইমন মোল­া জানায় ২১ মার্চ রাতে নুরে আলমকে অপরহরণ করে খুলনা সদর থানাধীন টুটপাড়া এলাকার একটি বাড়ির নিচতলায় আটক রাখা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য আসামির পরামর্শ অনুযায়ী ইমন মোল­ার কাশেম সড়কে ভাড়া করা বাসার ৪র্থ তলায় একটি কক্ষে আটক রাখা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হেলাল উদ্দিন সকল আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে আবেদন করে প্রেরণ করলে আদালত তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ দিনের রিমান্ডের অনুমতি প্রদান করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এ্যান্ড সিপি) মোহাম্মদ আহসান হাবীব জানান, জনৈক নূরে আলম মোল­া (৫৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার ভাড়া বাসা হতে শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে অপহরণ করে। পরবর্তীতে তাকে খুলনা সদর থানাধীন গল­ামারী ৪নং কাশেম সড়কে জনৈক শেখ মোঃ সালাউদ্দিনের বাড়ির ৪র্থ তলার একটি ফ্লাটে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য ১ কোটি টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার তাদের গ্রেফতারের জন্য সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকায় রাতভর অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় জিয়াউস সাদাত জিয়া, ইমন মোল­া, মাহাবুব হাসান পিয়ার, জয় হাসান ও শাকির রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভিকটিম ব্যবসায়ী নূরে আলম মোল­াকে আটকাবস্থা থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে কৌশিক আহমেদের দায়ের করা এজাহারের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার মামলা দায়ের করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ