খুলনা | মঙ্গলবার | ২২ এপ্রিল ২০২৫ | ৯ বৈশাখ ১৪৩২

রাতারাতি বেড়েছে টোলে এক টাকা

রূপসা ঘাটে টোল আদায়ের নামে চলছে হয়রানি

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০২:২৮ এ.এম | ২৫ মার্চ ২০২৫


চোর তাড়িয়ে এবার ডাকাত আনা হয়েছে রূপসা ঘাটে। বিগত সরকারের আমলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) কর্তৃপক্ষ রূপসা ঘাটে টোল আদায়ের নামে চালানো হতো জুলুম ও হয়রানি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর ক্ষমতার পালাবদল হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে রূপসা ঘাটের টোল ইজারা নেয় শেখ আলী আকবর। টোল ইজারা নেওয়ার পর শুরু হয় যাত্রীদের সাথে রুঢ় আচরণ, জুলুম, অত্যাচার ও রাহাজানি। জনগুরুত্বপূর্ণ এ খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় হাজার হাজার যাত্রী। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতি টোল আদায় করা হয় এক টাকা করে। অথচ সেখানে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া এমনকি রাতারাতি গত ২১ মার্চ থেকে জনপ্রতি টোল আদায় করা হচ্ছে দুই টাকা করে। এতে রূপসাঘাট দিয়ে পারাপাররত যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। টোল আদায়ের নামে চলছে হয়রানি। 
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপসাঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ট্রলারে পারাপার হয় হাজার হাজার যাত্রী। জনপ্রতি ট্রলারে রীতিমত পারানি গুণতে হয় চার টাকা, টোল দিতে হয় দুই টাকা মোট ছয় টাকা। অর্থাৎ, একজন যাত্রীর প্রতিদিন ট্রলার পারাপার হতে পারানিসহ টোল গুণতে হয় ১২ টাকা। একজন ব্যক্তি বাইসাইকেল নিয়ে পার হতে হলে পারানি গুনতে হয় পাঁচ টাকা, টোল গুণতে হয় দুই টাকা। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তির বাইসাইকেল নিয়ে ট্রলারে পারাপার ও টোল গুণতে হয় ১৪ টাকা। একজন ব্যক্তি ট্রলারে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হতে গেলে পারানি গুনতে হয় ২০ টাকা, টোল গুণতে হয় ১০ টাকা। অর্থাৎ, মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার হতে টোল গুণতে হয় ৬০ টাকা। এমনও আছে অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে একাধিকবার পারাপার হয়ে থাকেন। এসব কারণে নিম্ন আয়ের একজন মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টকর ব্যাপার। 
ফকিরহাট উপজেলার মানসা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, রূপসাঘাটে জনপ্রতি ট্রলারে পারানি নেওয়া হয় চার টাকা এবং টোল নেওয়া হতো এক টাকা। অথচ সেখানে টোল নেওয়া হচ্ছে দুই টাকা করে। এ ছাড়া অন্যান্য মালামাল নিতে গেলেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত অর্থ। যা খুব কষ্টকর। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মহল। 
বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোর্ট গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতি রূপসাঘাটে টোল আদায় করা হতো এক টাকা করে। কিন্তু সেখানে জনপ্রতি রূপসা ঘাটে টোল এক টাকা বাড়িয়ে সেখানে নেওয়া হচ্ছে দুই টাকা করে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে খুব কষ্টকর। 
রূপসা উপজেলার জাবুসা গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, রূপসা ঘাটে জনপ্রতি টোল আদায় করা হতো এক টাকা। অথচ ২১ মার্চ থেকে জনপ্রতি টোল নেওয়া হচ্ছে দুই টাকা করে। ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে রূপসাঘাটে টোল আদায়ের নামে চালানো হয়েছে অত্যাচার ও রাহাজানি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হতে বাধ্য হয়। শুরু হয় নতুন অধ্যয়। আমজনতার মাঝে ফিরে আসে প্রশান্তি। এমনকি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় রূপসাঘাটে টোল। কিছু দিন শুরু হয় টোল আদায়। তখনও জনপ্রতি টোল আদায় করা হতো এক টাকা। কিন্তু স¤প্রতি টোল বাড়িয়ে ধার্য্য করা হয়েছে দুই টাকা। যা সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ২১ মার্চ থেকে রূপসা ঘাটে দুই টাকা করে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এর আগে জনপ্রতি টোল নেওয়া হতো এক টাকা করে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির মোটরসাইকেল নিয়ে খেয়াপার হতে হলে ট্রলারে পারানি দিতে হয় বিশ টাকা, টোল গুণতে হয় দশ টাকা। অর্থাৎ, খেয়াঘাট পারাপার হতে হলে পারানি ও টোল মিলে গুণতে ৬০ টাকা। তিনি ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষের হটকারী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সচেতন মহলদের সোচ্ছার হওয়ার আহŸান জানান।  

্রিন্ট

আরও সংবদ